নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি বছরের জুনে বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালুর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। সে ক্ষেত্রে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যাত্রীকে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ায় বিমান চলাচল ব্যবস্থা কিছুটা ডানা মেলতে শুরু করেছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পাকিস্তানে এবং ২৫ মে থেকে ভারতে স্বল্প পরিসরে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট চালু করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি দেশের মতো বাংলাদেশেও জুন মাস থেকে সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালুর চিন্তাভাবনা চলছে।
বুধবার (২৭ মে) বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মহিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে আমরা আসব।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এর আগেই ২১ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করার ব্যাপারে ইঙ্গিত এসেছে। এরই অংশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে।
এদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে বেবিচক। সংস্থার চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেছেন, ‘কীভাবে আকাশপথে যাত্রীরা করোনা প্রতিরোধ করে চলাচল করবেন, সে ব্যাপারে একটি নির্দেশনা এরিমধ্যে আমরা দিয়েছি। দেশের সব বিমানবন্দরকে আমরা প্রস্তুতি নিতে বলেছি। সম্প্রতি দেশে করোনা আক্রান্তের হার ও গণপরিবহনের বিষয়গুলো বিবেচনা করছি। আশা করি বৃহস্পতিবার (২৮ মে) এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত দিতে পারব।’
অভ্যন্তরীণ রুট চালু হলেও প্রতিটি ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা উড়োজাহাজের ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি থাকতে পারবে না বলে বেবিচকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধি করা হতে পারে। এ ব্যাপারে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বন্ধ রাখার যৌক্তিক কোনো কারণ আমরা দেখছি না। আমরা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট পরিচালনা করব। ফ্লাইটে যাত্রীও অর্ধেক থাকবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তারা আসনে বসবেন। তাই বিপদ দেখছি না।’
গত ২১ মার্চ থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব না কমায় কয়েক দফা এ নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ মে পযর্ন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। তবে এর মধ্যে কয়েকবার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সীমিত পরিসরে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও উচ্চপর্যায়ের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় সেটি কার্যকর হয়নি। ফ্লাইট চালু না হলেও ১০ মে বেবিচকের এক সার্কুলারে ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে নিরাপদে বিমান চলাচল করতে যাত্রী, বিমানবন্দর, বিমান সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের মোট ৩৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর অংশ হিসেবে যাত্রীদের একটি ফরম দেওয়া হবে। ফরমে যাত্রীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, জন্মতারিখ, বর্তমান ঠিকানা, এয়ারলাইনসের নাম, ফ্লাইট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, শরীরের তাপমাত্রা, মোবাইল ও ই-মেইল নম্বর পূরণ করতে হবে। একই সঙ্গে ফরমে তিনটি প্রশ্নে হ্যাঁ অথবা না টিক দিয়ে উত্তর দিতে হবে। এক নম্বর প্রশ্নে থাকবে, ‘আপনার (যাত্রী) কি জ্বর বা কফ হচ্ছে?’ দ্বিতীয় প্রশ্নে থাকবে, ‘আপনার কি জ্বর এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে?’ এবং তৃতীয় প্রশ্নে থাকবে, ‘গত ১৪ দিনে কোভিড-১৯ বা এই রোগের কোনো উপসর্গ থাকার কারণে আপনাকে কোনো বিমানবন্দরে বোর্ডিং থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে কি না।’
এই তিন প্রশ্নের যেকোনো একটির উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে যেকোনো যাত্রীকে আর ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হবে না। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ওই যাত্রীকে পরবর্তী চিকিৎসা নিতে হবে। তবে এই তিন প্রশ্নের উত্তর না হলেও যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। এ ছাড়া ফ্লাইটে কেবিন ক্রুদের এন-৯৫ মাস্ক, চশমা, রাবারের হ্যান্ড গ্লাভস ও ফেসিয়াল মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক প্রতি চার ঘণ্টায় বদলাতে হবে। তাদের ককপিটে প্রবেশ যত সম্ভব কমিয়ে ইন্টারকমে যোগাযোগ করতে হবে। ফ্লাইটে দুজন কেবিন ক্রু একসঙ্গে খাবার পরিবেশন করতে পারবেন না। ফ্লাইটের দুই সারিতে আসন খালি রাখতে হবে। ক্রু ও পাইলটদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী বহন করে থাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস–বাংলা, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এই চার বিমান সংস্থা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে প্রতিদিন ১৪০টির মতো অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করতো।