নিজস্ব প্রতিবেদক: বিজি-০২২ ফ্লাইটের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুম জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ‘কোমায়’ চলে গেলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই পাইলট। মাস্কাট থেকে ঢাকাগামী এই ফ্লাইটে মাঝ আকাশে ঘটে যাওয়া ওই মুহূর্তের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন কয়েকজন যাত্রী।
তারা জানান, বিমান ছাড়া হলো। প্রায় তিন ঘণ্টা বিমানটি আকাশে উড়ে। আকাশ স্বচ্ছ ছিল। বিমানও স্বাভাবিকভাবেই উড়ছিল। এরইমধ্যে পাইলট অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু দুই পাইলট ও ক্রু’রা যাত্রীদের কিছুই বুঝতে দেননি। যাত্রীরা কেবল ধারণা করতে পেরেছিলেন- হয়তো বিমানের কোনও যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পাইলটের অসুস্থতার কথা জানলে যাত্রীরা ভয় পেতেন।
হঠাৎ ক্রু ঘোষণা করেন, ‘প্রিয় ভদ্রমহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ, আপনাদের মধ্যে কোন চিকিৎসক থাকলে নিকটবর্তী কেবিন ক্রু’র সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন। আমি আবারও বলছি, আপনাদের মধ্যে যদি কেউ চিকিৎসক থাকেন তাহলে দ্রুত আমাদের জানান।’ কিন্তু এমন কাউকেই পাওয়া যায়নি।
এক যাত্রী বলেন, কেবিন ক্রু’র ঘোষণার ১৫-২০ মিনিটের মাথায় ভারতের নাগপুরে বিমানটি অবতরণ করে। অবতরণের পর যখন প্লেনটি থামল, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটি অ্যাম্বুলেন্স প্লেনের দরজার সামনে চলে আসে। হঠাৎ দেখি পাইলটকে নিয়ে যাচ্ছে। তাকে কয়েকজন তুলে নিয়ে গেছে। একজন কেবিন ক্রু অক্সিজেন সিলিন্ডার ধরে ছিলেন। মুহূর্তেই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ফ্লাইটের ফার্স্ট অফিসার ও কেবিন ক্রু’রা অত্যন্ত দক্ষ ও পেশাদার ছিল। তাদের কিছুটা উদ্বিগ্ন দেখালেও তারা কখনও আমাদের পাইলটের অসুস্থতার বিষয়টি বুঝতে দেননি। বুঝলে হয়ত আকাশেই অনেকে ভয় পেত।
তিনি বলেন, পাইলটকে নিয়ে যাওয়ার পর ভারতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন ফ্লাইটে ঢুকে আমাদের তল্লাশি করে। প্লেনের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালায়। এরপর আমাদের প্লেন থেকে নেমে বিমানবন্দরে যেতে বলে। তবে যাত্রীরা বিমানবন্দরে যেতে রাজি হচ্ছিল না। কেউ কেউ নেমে গেলেও অনেকেই জেদ করে বসে ছিলেন। পরে অবশ্য তারাও নামেন। রাতে আমাদের নতুন বিমানে করে ঢাকায় আনা হয়।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে ওমানের মাস্কাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিজি-০২২ ফ্লাইটটি নিয়ে ঢাকা আসার পথে ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন কাইউম অসুস্থ বোধ করেন। পরবর্তীতে বিমানটিকে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করানো হয়।
আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাপ্টেন কাইয়ুম কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কাছে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানান। একই সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন।
কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বিমানটিকে তার নিকটস্থ নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দিলে কো-পাইলটই বিমানটিকে অবতরণ করান। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের বিমানটিতে ১২৪ যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদে ছিলেন।
সাননিউজ/এমআর