নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালে মেয়র-ইউএনও কাণ্ডের জের ধরে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া বিতর্কিত বিবৃতিতে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তার মধ্যে ক্ষোভ নতুন মাত্রা নিতে যাচ্ছে।
ঐ বিবৃতির মাধ্যমে সংগঠনের যাবতীয় অর্জন ম্লান করে দেয়া হয়েছে বলে কনিষ্ঠ থেকে জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা মনে করছেন। একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এরকম তথ্য পাওয়া গেছে।
তারা জানিয়েছেন, বর্তমান অবস্থায় অ্যাসোসিয়েশনের কোনো সভা ডাকা হলে তাতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন না বলে একপ্রকার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেকে বলছেন, অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে অন্তর্র্বতী মেয়াদে অ্যাডহক কমিটিও গঠন করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ ও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া বিবৃতিতে সরকারের শীর্ষ মহল খুবই ক্ষুব্ধ। এরই জেরে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এক জন কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের এক জন নেতাকে ডেকে বিবৃতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি।
কর্মকর্তারা বলছেন, এই করোনাকালে গৃহহীন মানুষকে ঘর দেয়া, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্পসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাজ এগিয়ে নিতে কর্মকর্তারা কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ে নিরলস পরিশ্রম করে প্রশাসনকে যে উচ্চতায় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছিলেন, তার সবকিছুই ম্লান হয়ে গেছে রাজনীতিকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে বিবৃতি দেয়ার জন্য।
এক জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আগে প্রশাসনের মধ্যে কোনো ঘটনা ঘটলে প্রথমে অ্যাসোসিয়েশন মুখ্যসচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ জ্যেষ্ঠ সচিবদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। এখন সেই প্রথা নেই। দু-এক জন ব্যক্তির মর্জিমাফিক চলছে অ্যাসোসিয়েশন। প্রায় ১৭ জন এসি ল্যান্ড-ইউএনও রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা হয়েছেন। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রে বিচার পাননি। এ নিয়ে মাঠের কর্মকর্তারাও খুশি নন।
সূত্র আরও জানায়, ঐ বিবৃতি দেয়ার ঘটনায় অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি গঠন অথবা নেতৃত্বের কিছু পরিবর্তন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। আর অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক যদি জ্যেষ্ঠ সচিবরা বর্জন করেন, তাহলে তা বর্তমান কমিটির জন্য বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করবে। সে রকম বাস্তবতায় বর্তমান কমিটি হয়তো নিজেরাই মেয়াদের আগেই কমিটি ভেঙে দিতে পারে।
এছাড়া বিবৃতিতে ১৭টি বানান ভুল থাকায় সেটা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, সচিবদের দেওয়া বিবৃতিতে যদি এত বানান ভুল হয়, আর যে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে কাজ করে সেই রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আঙুল তোলা হয়, সেটি আত্মঘাতী ছাড়া আর কী হতে পারে।
তিনি বলেন, এখন টকশোতে সচিবদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এসব দেখেশুনে লজ্জায় মুখ দেখানো যায় না।
তার মতে, সিভিল প্রশাসনের অর্জনগুলো এখন প্রশ্নের মুখে তুলে দেয়া হয়েছে। এটি বেশি দিন চলতে পারে না।
সাবেক এক সচিব বলেন, বিবৃতিটি শালীনতার সব মাত্রা অতিক্রম করেছে। এটি শিষ্টাচারবহির্ভূত। সচিবদের কাছ থেকে এরকম ভাষা কাম্য হতে পারে না।
এক জন সচিব দুঃখ করে বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্ব যাদের হাতে তাদের অধিকাংশই ছাত্রজীবনে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তারা কীভাবে এই আগস্ট মাসে যে পরিবারটি ছয় জন সদস্যকে হারিয়েছে, সেই পরিবারের এক জনকে রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিতে পারল!
প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। তখন সচিব মফিজুর রহমান সভাপতি ও ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর ছিলেন মহাসচিব। দুই বছর পর পর সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি হেলালুদ্দীন আহমদ ও ইউসুফ হারুন কমিটির মেয়াদ শেষে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবীর বিন আনোয়ার সভাপতি ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সান নিউজ/এফএআর