নিজস্ব প্রতিবেদক:নতুন সীমানা নির্ধারণে আইন পাসের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। আসন্ন ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সুপারিশ করে তারা । ‘দৈব-দুর্বিপাকে’ কোনো সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ করতে না পারলে আগের নির্বাচনে যেভাবে হয়েছে, সেই সীমানার ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনের বিধান রেখে সংসদে তোলা একটি খসড়া আইনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি।
রোববার (২২ আগস্ট) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল-২০২১’ নিয়ে আলোচনা হয়। পরে বিলটি পাসের সুপারিশ করে এর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়।
গত ৩ জুলাই বিলটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে খসড়া আইনটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জমান সরকার বলেন, “বিলটি আমরা চূড়ান্ত করে দিয়েছি। মন্ত্রণালয় যেভাবে দিয়েছে আমরা তাতে কোনো পরিবর্তন আনিনি।”
সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে বিলের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
আইন কার্যকর হলে ১৯৭৬ সালের ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স’ রহিত হবে। প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচন কমিশনকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা বিদ্যামান আইনে নেই।
বিলে বিদ্যমান আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, ‘দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’।
সংসদের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং বাংলায় আইন করতেই মূলত বিলটি আনা হয়।
সামরিক সরকারের আমলে জারি হওয়া ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্সের’ সংশোধন করতে নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি।
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করে বিদ্যমান আইনগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। গেল একাদশ জাতীয় সংসদের আাগে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনটি সংস্কারের ঘোষণাও দেওয়অ হয়। কিন্তু তা আর হয়নি। পরে বিদ্যমান আইনেই সীমানা পুনর্বিন্যাস করে ওই নির্বাচন করে ইসি।
২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে পাঠায় নির্বাচন কমিশন। সেই খসড়ায় বিদ্যমান জনসংখ্যা কোটার ভিত্তিতে আসন বণ্টনের সঙ্গে ভোটার সংখ্যা যুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। এছাড়া সিটি করপোরেশন, বড় বড় শহরের ও পল্লী এলাকার ভারসাম্য রক্ষার কথাও বলা হয়েছিল।
সেই খসড়ায় জনসংখ্যার কোটা নামে একটি উপধারাও যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল নির্বাচন কমিশন।
সংবিধানের ১১৯ (গ) অনুচ্ছেদে ইসিকে সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। আবার ১২৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,‘সংসদ আইনের দ্বারা নির্বাচনী এলাকার সীমা নির্ধারণ’ করবে ইসি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘সংসদ নির্বাচন এলাকা সীমানা নির্ধারণ বিধান অধ্যাদেশ-১৯৭৬’ জারি করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই অধ্যাদেশের বলে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃবিন্যাস হয়ে আসছে। নতুন আইন হলে এর বিধানে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বিদ্যমান আইনের ৮টি ধারার জায়গায় প্রস্তাবিত আইনে ৯টি ধারার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন ধারাটিতে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে বিধি প্রণয়নের সুযোগ নেই।
বিদ্যমান আইনের ধারা-১ এ একটি নতুন উপধারার প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে আইনটি ‘অবিলম্বে কার্যকর হবে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, ইসির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দেশের কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা যাবে না। এছাড়া বৈঠকে সংসদে উত্থাপিত ‘গান্ধী আশ্রম (ট্রাস্টি বোর্ড) বিল-২০২১’ এর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয় এদিন।
সাননিউজ/এএসএম