নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে তীব্র স্রোতের কারণে চার দিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রী পারাপারে এখন একমাত্র ভরসা লঞ্চ। এ কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভিড় লেগেই আছে। তবে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিস্রোতের কারণে এখন লঞ্চ চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ফেরি না থাকায় তাই ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাটসূত্র জানায়, পদ্মায় অস্বাভাবিক হারে পানি উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বুধবার বেলা আড়াইটা থেকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় ঘাট থেকে গণপরিবহনগুলো লঞ্চে যাত্রী পারাপার করছে। এই নৌপথে ৮৭টি লঞ্চ থাকলেও বর্তমানে প্রায় ৭০টি লঞ্চ চলাচল করছে।
শনিবার (২১) বেলা দেড়টার দিকে বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জামালউদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে পদ্মার পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বর্তমানে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে বর্তমান সময়ে ফেরি চলাচলের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া পদ্মায় যে ঘূর্ণিস্রোত, এর মধ্যে লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
জামালউদ্দিন আরও বলেন, এই নৌপথে ফেরি বন্ধ থাকায় এখন আর কোনো যানবাহন পারাপারের জন্য আসছে না। তবে যাত্রীরা আসছেন। এ কারণে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ রয়েছে। অতিরিক্ত ভিড় নেই। যাত্রীরা আসছেন, লঞ্চে পারাপার হয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে যখন লঞ্চগুলো যায়, তখন খুবই সতর্কতার সঙ্গে যায়। সেতুর নিচে স্রোতের প্রবল বেগ ও ঘূর্ণিস্রোত রয়েছে।
লঞ্চ চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে তা অনেকটাই উপেক্ষিত। আজ সকালে বাংলাবাজার লঞ্চঘাটে দেখা যায়, শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো যাত্রীর চাপ তুলনামূলক অনেকটাই কম। তবে বাংলাবাজার থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেশ বেশি। উভয় পাড় থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলোয় নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী। লঞ্চের নির্ধারিত আসন ছাড়াও ছোট ছোট এই লঞ্চগুলোর সামনে-পেছনে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থেকে পদ্মা পারাপার হতে দেখা যায়। বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে মাস্কের সঠিক ব্যবহার ছিলো না।
বরিশাল থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী মজিবর খান বলেন, মাঝপদ্মায় যেমন স্রোত, তেমন ঢেউ। সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় লঞ্চগুলো ডানে-বাঁয়ে কাত হয়ে যায়। খুবই ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে পারাপার হতে হচ্ছে। ফেরি চালু থাকলে আমরা এই বর্ষা মৌসুমে কখনোই লঞ্চে উঠি না। এখন বাধ্য হয়ে লঞ্চে ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে পদ্মা পাড়ি দিলাম।
বরিশাল থেকে আসা রাসেল হোসেন বলেন, বাস থেকে নেমে অনেকটা পথ হেঁটে লঞ্চে উঠতে হয়। বড় ব্যাগ থাকলে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকায় পুরো পথ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বসার জায়গা থাকে না।
বেলা দুইটার দিকে বিআইডব্লিউটিএ বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ফেরি না চলায় ফেরির সব যাত্রী লঞ্চে পারাপার হচ্ছেন। তীব্র স্রোতের কারণে লঞ্চ চলাচলে কিছুটা সমস্যা থাকায় সন্ধ্যার পরে লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হচ্ছে। ভোর থেকে আবার ৮৭টি লঞ্চ এই নৌরুটে চলছে। তাই যাত্রীদের চাপ সেভাবে নেই। যাত্রীদের মাস্ক ছাড়া লঞ্চ উঠতে দেয়া হচ্ছে না। লঞ্চের আসনে যাত্রীরা বসতে চান না। তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন। তাই প্রতিটি লঞ্চে দাঁড়ানো যাত্রী দেখা যায়।
বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, কবে থেকে ফেরি আবার ছাড়া হবে, পদ্মায় স্রোত না কমলে তা বলা যাচ্ছে না। আপাতত এই নৌরুটের চলাচলরত ফেরিগুলো অন্য নৌরুটে পাঠানো হয়েছে। যানবাহনগুলো এখন আর এই নৌরুটে আসছে না। সেগুলো বিকল্প (দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া) নৌপথ হয়ে ঢাকামুখী হচ্ছে।
সান নিউজ/এফএআর