নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ইউরোপ ছাড়িয়ে এখন এশিয়াতেও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হওয়ার পর প্রথম ১৪ দিন এ সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দুই-ই বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সংক্রমণের গতি উর্ধ্বমুখী। মে মাসে ‘পিক’ টাইম (সংক্রমণের শীর্ষ পর্যায়) আসবে এমন ধারণা থাকলেও, তা এখনও আসেনি।
জুনের মাঝামাঝি সর্বোচ্চ এ সংক্রমণ হতে পারে। এই হার কমতে ঈদুল আযহা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলেও অনেকের মত।
দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ১০ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত যে হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০ মে থেকে ৩১ পর্যন্ত একই হারে তা বৃদ্ধি পাবে। ১০ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১২ হাজার ৯৬৮, সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ১৭২ জনের।
অন্যদিকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ২৬ হাজার ৭৩৮। মৃত্যু হয়েছে ৩৮৬ জনের। যদি একই হারে ২১ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় তাহলে মে মাস শেষে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৮ থেকে ৪০ হাজারে। মৃত্যু হতে পারে ৫শ’র বেশি।
এর আগে দেশের আট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, মে মাসের শেষ নাগাদ দেশে শনাক্তের সংখ্যা আনুমানিক ৪৮ থেকে ৫০ হাজারে গিয়ে দাঁড়াবে। সব মিলিয়ে মৃত্যু হতে পারে ৮০০ থেকে ১০০০ জনের।
ওই পূর্বাভাস সম্পর্কে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, 'এ পূর্বাভাস যে একেবারে ভুল ছিল তা বলা যাবে না। আমাদের শনাক্ত রোগীর বাইরেও করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। সেই হিসেব ধরলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আসলেই বাড়বে।'
বে-নজির আহমেদ আরও বলেন, 'আমাদের এখানো প্রথম দিকে নমুনা পরীক্ষা কম হতো। শনাক্তও কম হয়েছে। শনাক্তের বাইরে অনেকেই আছেন। এ বাদেও দেড় থেকে দুই শতাংশ উপসর্গবিহীন রোগী রয়েছেন। তারা হাটে-বাজারে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করছেন। তাদের সংস্পর্শে গেছেন এমন অনেকেই আছেন, যাদের ট্রেস করা যাচ্ছে না।'
এদিকে ঈদ ঘিরে এখন যারা বাড়ি যাচ্ছেন, তারা যদি সঠিক নিয়মে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিন পালন না করেন তাহলে বিপদ আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। কারণ এবারের ঈদের জামাত মসজিদে মসজিদে হবে। দেশে ১ লাখের ওপরে মসজিদ আছে।
ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া এসব মানুষ যখন মসজিদে ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করবেন, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াবেন, তখন এক জনের সংস্পর্শে গড়ে আরও দুই জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াবে। এতে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা লাখের ওপরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
করোনায় বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে উল্লেখ করে বে-নজির আহমেদ বলেন, এক মাস আগেও বাংলাদেশ সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বে ১৭০ নম্বরে ছিল। এক মাসের ব্যবধানে ৩০ নম্বরে চলে এসেছে। ঈদের কয়েক দিন পরই এটা ২০ নম্বরে নেমে আসবে। এভাবে চললে বিশ্বের সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর তালিকায় যে কয়টি দেশ আছে তাদের পাশে যেতে বেশি দিন লাগবে না।