নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কবলে পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে যশোরে দুইজন, ভোলায় দুইজন, পটুয়াখালীতে দুইজন, পিরোজপুরে একজন, সাতক্ষীরায় একজন ও চট্টগ্রামে একজন রয়েছেন।
জানা যায়, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় রাসেদ (৬) নামে এক শিশু ও কলাপাড়ায় শাহ আলম নামে সিপিপি’র এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি দলের সদস্য শাহ আলম নৌকাযোগে একটি খাল দিয়ে যাওয়ার সময় দমকা হাওয়ায় নৌকাটি দুলতে থাকে। এতে তিনি পানিতে পড়ে যাওয়ার পর গামবুট ও গায়ে ভারি পোশাক থাকার কারণে আর উঠতে পারেননি।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় সিদ্দিক ফকির (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। এছাড়া এক নারী গুরুতর জখম হয়েছেন। বুধবার (২০ মে) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর কচ্ছুপিয়া এলাকার রেইনট্রি গাছ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে সিদ্দিক ফকির জখম হয়। তাকে তাৎক্ষণিক চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পথের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। একই সময় চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ইয়ানুর বেগমের (৩০) গায়ে সুপারি গাছ ভেঙ্গে মাথায় আঘাত লাগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তার মাথায় প্রায় ২৫/২৬টি সেলাই লেগেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে ভোলায় ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে পড়ে রামদাসপুর চ্যানেল ৩০ যাত্রীসহ একটি ট্রলার ডুবে একজন নিহত হয়েছে। ট্রলার ডুবিতে নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মনিরাম এলাকায়। ওই ব্যক্তিসহ ৩০ যাত্রী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসেন। তারা লক্ষ্মীপুর জেলার মজু চৌধুরী ঘাট থেকে ট্রলার যোগে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে ভোলায় আসে। ওই ট্রলার রাজাপুর সুলতানীঘাটের কাছে এলে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই সময় স্রোতের টানে ভেসে যান রফিকুল ইসলাম। পরে তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক রতন কুমার শীল।
যশোরের চৌগাছায় গাছ চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আজ রাত ৮টার সময় এই ঘটনা ঘটে। জেলায় সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হওয়ার খবর দিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। গোটা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা, ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ঝড়ে দেয়ালচাপায় একজন নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যায় উপজেলা শহরে মঠবাড়িয়া কলেজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান মঠবাড়িয়া থানার ওসি মো. মাসুদুজ্জামান।
সাতক্ষীরায় ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। রাতে শহরের সংগীতা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আম্পানের প্রভাবে উত্তাল জোয়ারের স্রোতে সন্দ্বীপ উপকূলে সালাউদ্দিন নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নতুন চর থেকে মৃত সালাউদ্দিনের লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। সালাউদ্দিন পৌরসভা ২নং ওয়ার্ডের হোনাজীর বাড়ির আবুল কাশেমের পুত্র।
এদিকে, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। বুধবার (২০ মে) রাত ৮টার পর দ্বিতীয়বার ১৪৮ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে এ জেলায়। প্রবল বর্ষণে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নয় গ্রাম। এ ছাড়া ১৩টি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার (২০ মে) রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর উত্তর পূর্ব দিকে এগিয়ে যাবে। স্থলভাগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আম্পানের বাতাসের গতি কমবে। সেই সঙ্গে এটি বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে যাবে।
ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর পূর্ব দিকে সরে বৃহস্পতিবার (২১মে) সকালের আগে আবার পাবনা অঞ্চল দিয়ে উত্তর দিকে চলে যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, স্থলভাগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আম্পান স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যাবে। এর প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ স্থানে বৃষ্টি হবে। শুক্রবার থেকে রোদেলা আবহাওয়ার দেখা মিলতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার সাগর উত্তাল থাকবে। এর আগে তাই মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সহ উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত তুলে নেওয়া হবে না।