নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় আগুনে পুড়ে নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থাকা ২১ মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বেলা বারোটা থেকে শুরু করে দুপুর একটার মধ্যে এসব মরদেহ হস্তান্তর করা শেষ হয়।
সকাল থেকে নিহতদের মরদেহ নিতে আসা স্বজনরা জড়ো হোন। পরে একে একে সকলের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষে স্বজনদের হাতে মরদেহের কফিন তুলে দেয় সিআইডি।
এর আগে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গ ও ঢামেক হাসপাতাল মরচুয়ারীতে থাকা মরদেহগুলো ঢামেক মর্গে নেয়া হয়। পরে রাতে তাদের গোসল কাজ সম্পন্ন করে কাফন পড়িয়ে বক্সে করে রাখা হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে একে একে স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস লি. আগুনের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ৪৮ মরদেহের মধ্যে ডিএনএ প্রোফাইলের মাধ্যমে ৪৫ শ্রমিকের পরিচয় পাওয়া গেছে। ৩ মরদেহের পরিচয় এখনো মিলেনি। এ জন্য এখনো কাজ চলছে।
এর আগে ৪৫ মরদেহের মধ্যে বুধবার (৪ আগস্ট) ২৪ জনের মরদেহ তাদের স্ব স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন সিআইডি।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা মঞ্জিল মিয়া ও তার মেয়ে আসেন সকাল সোয়া আটটায়। মঞ্জিল মিয়া বলেন, তার স্ত্রী মিনা খাতুন (৪৩) এর মরদেহ রয়েছে এখানে, গতকাল সংবাদ পেয়ে রাতে তারা ঘুমাননি। ছুটে আসেন ঢামেক মর্গে।
এর আগে আসেন ভোলা জেলার দক্ষিণ আইচা উপজেলার বাসিন্দা সেখানকার মসজিদের ইমাম ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার ছেলে শামীম (১৮) এর মরদেহ আছে এখানে। ছেলের মরদেহ নিতে এসেছেন তিনি।
তিনি জানান, তার ছেলে গ্রামে মাদরাসায় পড়াশুনা করতো। লকডাউনে তাদের মাদরাসা বন্ধ থাকায়, পরিবারের অভাবের কারণে সে গ্রামের পরিচিতদের মাধ্যমে কাজ নিয়ে ছিল চট্টগ্রামে বনফুল সেমাইয়ের কারখানায়। সেখান থেকে রোজার ঈদের আগে সেখান থেকে একটু বেশি বেতনে চাকরি নিয়েছে হাসেম ফুডস কারখানায়। সেটা তিনি জানতেন না। আগুনের ঘটনায় ঘটে যাওয়ার পর দিন, প্রতিবেশী সহকর্মীদের স্বজনদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। তার ছেলেও সেই কারখানায় কাজ করতো। পরে এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সংবাদ পাননি। পরে সিআইডি র কাছে রক্ত দিয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, গতকাল জানতে পেরেছি, তার মরদেহ পাওয়া গেছে। তাই চলে এসেছি ছেলের মরদেহ নিতে।
শামীমরা দুই ভাই দুই বোন, সে ছিল ৩য়। শুধু শামীম বা মিনা খাতুন এর পরিবারের স্বজনরা নয়, পরিচয় পাওয়া ২১ পরিবারের স্বজনরাই ছুটে আসেন তাদের প্রিয় জনের মরদেহ নিতে।
আজ যাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হচ্ছেন, মোসাঃ মাহমুদা আক্তার, সান্তা মনি, মাহবুবুর রহমান, জিহাদ রানা, রহিমা আক্তার, মিনা খাতুন, মোঃ নোমান, আমেনা আক্তার, মোসাঃ রহিমা, রাবেয়া আক্তার, মোঃ আকাশ মিয়া, মোঃ নাজমুল হোসেন, কল্পনা রানী বর্মন, স্বপন মিয়া, শেফালী রানী সরকার, মোসাঃ অমৃতা বেগম, মোঃ শামীম, সেলিনা আক্তার, তাসলিমা আক্তার, ফাকিমা আক্তার, মোঃ হাসনাইন।
সান নিউজ/এফএআর