নিজস্ব প্রতিবেদক: পোশাক শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের চাকরি হারানোর ভয় দেখি কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য করছে কারখানা মালিকপক্ষ। তাই তারা চাকরি বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন।
রাজধানীতে ফেরা শ্রমিকরা বলছেন, শুক্রবার (৩০ জুলাই) রাতে কারখানার সুপারভাইজাররা ফোন করে কর্মস্থলে ফিরতে বলেছেন। বলা হয়েছে, ১ আগস্টের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ না দিতে পারলে অনেকের চাকরি যাবে। এই ভয়ে ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহনে যে যেভাবে পারছেন কয়েক গুণ ভাড়া বেশি দিয়ে ঢাকায় ফিরছেন।
মালিকদের অনুরোধে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলা থাকবে বলে শুক্রবার (৩০ জুলাই) রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এদিকে ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে বিধিনিষেধে আটকে পড়েছেন শ্রমিকরা। লকডাউন পুরোপুরি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত গ্রামে অবস্থানরত কোন পোশাক শ্রমিক-কর্মচারি কারখানায় কাজে যোগদান করতে না পারলে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।
এ সময়ে কারখানার আশপাশে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কারখানা মালিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংগঠনটি। কিন্তু শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের বাধ্য করা হচ্ছে।
মালিকরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, কারখানায় ফিরতে কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না। ফতুল্লা এপিরিয়ালসের মালিক বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, শ্রমিকদের বাধ্য করব কিভাবে? আমরা যেটা করেছি ফোনে বা এসএমএসে সুপারভাইজারদের বলছি, আপনারা যার যার লাইনের শ্রমিকদের বলে দেন ফ্যাক্টরি চালু হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফ্যাক্টরি চালু হচ্ছে আর বাধ্য করা দুটো তো এক না। শ্রমিককে চাকরি থেকে বাদ দিতে তো আমরা পারব না। একটা তো আইন বলে আমরা তাকে বাদ দিতে পারব না। আমি ফ্যাক্টরি খুলছি তাকে তো বলতেই হবে তুমি কাজে যোগদান করো। তাকে তো ইনফর্ম করতে হবে।
শ্রমিকদের কষ্ট লাঘবে গণপরিবহন খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাস চালু থাকলে সমস্যা কোথায়। এই জিনিসটা আমি বুঝি না। পরিবহন খোলা রাখলে সবার জন্য ভালো। এই জিনিসটা চেকিংয়ের মধ্যে রাখতে হবে। কেননা আজকে তো গার্মেন্ট শ্রমিকদের ফিরতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু যারা টিকা, চিকিৎসা নিতে ঢাকা আসছে তাদের তো বেশি টাকা খরচ করে ঢাকায় আসতে হচ্ছে।
গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, কারখানা চালুর আগে শ্রমিকদের জন্য পরিবহন, টিকা ও ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
গার্মেন্টসহ কলকারখানা শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে রোববার (১ আগস্ট) দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সব ধরনের গণপরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ কথা নিশ্চিত করে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, শ্রমিকদের স্বার্থে সরকার গণপরিবহন চলাচল শিথিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব জেলায় এবং শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করবে। শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক।
সাননিউজ/এফএআর/এমআর