নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের অফিস-আদালত। একমাসে সরকারি বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সীমিত পরিসরে খোলা হলেও এখনও অধিকাংশই বন্ধ। এতে প্রশাসনিক ও অন্যান্য কাজে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতেও জনসমাগমের স্থান মসজিদ, পোশাক কারখানা, দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও সরকারি অফিস খুলে না দেওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন সেবা গ্রহীতারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাকার ধীরগতির সঙ্গে প্রশাসনিক কাজেও একটি দীর্ঘ জট তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশের অর্থনীতি ও প্রশাসনিক কারণে অফিস-আদালত খুলে দিতে হবে।
এরিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কিছু কিছু সেক্টর আস্তে আস্তে উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছি। কিছু জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যাতে মানুষ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করছি। কারণ এটা রোজার মাস।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গৃহীত লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষের কষ্টের কথা উল্লেখ করে রবিবার (১০ মে) প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া অনুদান গ্রহণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, 'সাধারণ ছুটির মধ্যে সরকার সব দিক বিবেচনা করেই এগোচ্ছে। তবে এখন পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে মাঠে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে হবে সবাইকেই। কলকারখানায় উৎপাদনেও যেতে হবে।'
বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে রোগী বাড়তে থাকায় ১৭ মার্চ হতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয় ২৬ মার্চ। সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনও বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকে।
অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি দিন দিন চরম পর্যায়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও মৌলিক চাহিদার বাইরে প্রয়োজনীয় সাধারণ কিছু সেবা নিতে পারছেন না মানুষ।
তবে লকডাউন পরিস্থিতিতে যে কোনো দেশের জন্য সুখকর নয় তা বিবেচনা করে উন্নত দেশগুলোর অনেকগুলোতেই লকডাউন বিরোধী আন্দোলন চলছে। ধীরে ধীরে সেসব দেশ লকডাউন তুলে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রয়াস নিচ্ছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড়া সংক্রান্ত ফাইল আটকে আছে। কারণ জরুরি কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদেরও চাপ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো আটকে আছে। কিছু জরুরি কাজ কেবল চলছে।
বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ করানো যাচ্ছে না। অফিস বন্ধ থাকায় নিয়ে ভুক্তভোগী একজন বলেন, 'আমার সার্টিফিকেট অ্যাটেস্টেট করাতে পারছি না শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।'
সাধারণ ছুটি থাকায় সরকারি-বেসরকারি সব নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনো পরীক্ষা বা নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারছেন না।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে খুব সহসাই করোনা যাচ্ছে না। আমাদের সব সেক্টরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ অবস্থায় করোনার সঙ্গেই চলতে হবে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের চলতে হবে। আর লকডাউন এভাবে দিলে দেশেরই ক্ষতি হবে।'
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, 'সাধারণ ছুটির মধ্যেও মাঠ প্রশাসন কাজ করছে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে। সরকার যখন মনে করবে তখন খুলে দেবে।'
সাধারণ ছুটি আগামী ১৬ মে শেষে আবারও ছুটি বাড়ানো হবে কিনা- সে ব্যাপারে এ সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তবে ছুটি না বাড়িয়ে পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে কাজে নেমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, 'এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আরও কিছু দিন হয়তো যেতে হবে। তবে মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে কাজ করতে চায়, ভালো খাবার খেতে চায়। আমাদের সবদিক বিবেচনা করে এগোতে হবে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।'
তিনি বলেন, 'ঘরে থাকাটা বাংলাদেশের জন্য না, সব দেশের মানুষের জন্যই চ্যালেঞ্জ। মানুষের যে পুঁজি সেটা শেষ। সেক্ষেত্রে মানুষ তো বাইরে বের হয়ে কাজ করতে চাইবে। এজন্য উপায় একটা বের করতে হবে। উপায় হচ্ছে, সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা। যারা ইয়াং তাদের সমস্যা না। যাদের জটিল রোগ এবং বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য সমস্যা। বাকিদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।'
সান নিউজ/ আরএইচ