জাহিদ রাকিব
করোনায় দেশে সাড়ে ১১ হাজার কোটিপতি বাড়লেও পথে বসেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। আয়-রোজগার না থাকায় হতাশা, দুঃখ-দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করছেন তারা। অনেকেই আয়ের অবলম্বনই হারিয়ে ফেলছেন। কারো বা হাত ছাড়া হয়েছে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
মো. হাফিজের বাড়ি পটুয়াখালীতে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে কিস্তির ওপরে ১২ লাখ টাকায় গাড়ি নিয়েছিলেন বছরের শুরুতে কোম্পানি থেকে। লকডাউনে কিস্তির টাকা দিতে না পারায় ঈদের আগে কোম্পানি তার গাড়ি নিয়ে গেছে। পরে গ্রামের বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে গাড়ি নিয়ে আসেন তিনি। প্রতিমাসে হাফিজকে ২৩ হাজার টাকা করে কিস্তি দিতে হয়। লকডাউনে ভাড়া না থাকায় কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাফিজের মত অনেকেই।
করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে মাসের শুরু থেকে। আর লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষগুলো পড়েছে বিপাকে। বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায়। আর এই লকডাউনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ছোট ছোট পিকআপ ভ্যানে করে যারা পণ্য সরবারহ করতো বিভিন্ন অফিস আদালতে তাদের জীবন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি ছোট পিকআপ ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
হাফিজের মত কারওয়ান বাজারে এমন চালক আছে তিনশর অধিক। লকডাউনে প্রতিদিন তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও কোন ভাড়া পান না।
আব্দুর রহমান কারওয়ান বাজারে দীর্ঘ তিন বছর যাবত গাড়ি চালায়। লকডাউনে মার্কেট, অফিস বন্ধ থাকায় এখন আর আগের মত ভাড়া মারতে পারে না। তিনি জানান, আগে দৈনিক ৪/৫টা ভাড়া হতো। লকডাউনে ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটা ভাড়া পান নাই তিনি। যার ফলে নিজের খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে গেছে।
এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে কাজি পাড়ায় থাকেন মো. সাইফুল। লকডাউনের আগে দৈনিক ভাড়া হতো ২০০০-২৫০০ টাকা। লকডাউনে এখন অলস সময় কাটছে তার। প্রতিদিন গাড়ির মালিক তাকে তাড়া দিচ্ছে গাড়ির জমা দিতে কিন্তু ভাড়া না থাকায় জমা দিতে পারেন না তিনি।
সাইফুল জানান, আমরা আগে সব ধরনের পণ্য আনা-নেয়া করতাম। লকডাউনে কোন ভাড়া পাই না।
পাশের গাড়িতে বসে থাকা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা এই স্ট্যান্ডে প্রতিমাসে সমিতিকে ১০০০ টাকা করে জমা দিয়ে থাকি। এই বিপদে সমিতি আমাদের এক টাকাও কোন সাহায্য-সহযোগিতা করে নাই। আর ইনকাম না থাকায় বাড়িতে পরিবারকে কোন টাকা পয়সা দিতে পারি না। এই করোনায় সরকার থেকেও কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাই না। প্রতিদিন খেয়ে, না খেয়ে এখানে গাড়ি নিয়ে বসে থাকি।
এই স্টান্ডের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ প্রতিমাসে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা রোড খরচের জন্য আমরা সবাই মিলে কিছু টাকা উঠাই। সে টাকাও সবাই দেয় না। আর আমরা নিজেরা চলতে পারি না সেখানে ড্রাইভারদের কিভাবে সহযোগিতা করবো?
সান নিউজ/এফএআর