নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার ভ্যাকসিন দেশেই উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং জনপ্রশাসন পদক ২০২০ ও ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) কালে গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এইটুকু বলবো, ভালো কিছু করলে যেমন আপনি পুরস্কার পাবেন আবার কেউ যদি খারাপ কিছু করে তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই। তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শৃঙ্খলাটা থাকতে হবে। সেটা অবশ্যই আমরা করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে আপনারা আরও বেশি জানার সুযোগ পান। মানুষের সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানতে পারেন। কিভাবে একেকটা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায় সেটা আপনারা সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করতে পারেন। আমি আশা করি সেই ভাবেই আপনারা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কিভাবে নেওয়া যায়, কিভাবে মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া যায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। যেন আমরা জাতির স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, সেটাই আমরা চাই।
ছেলের জন্মদিনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনে তার সঙ্গে থাকতে না পারায় কষ্ট লাগছে। একই সময় জয়ের নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছাতেই ছেলের নাম জয় রাখা হয়েছে। ২৬ মার্চের পরের সময়ে পরিবারের ওপর যে নির্যাতন নেমে এসেছিল, তা-ও বর্ণনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে আক্রমণ করে বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর আমরা সবাই গ্রেপ্তার হই। পরিত্যক্ত একটি বাসায় আমাদের রাখা হয়।
সন্তান প্রসবের সময় আমাকে পাকিস্তানি সেনারা হাসপাতালে যেতে দিয়েছিল, কিন্তু মাকে সাথে যেতে দেয়নি। বন্দি অবস্থায় জয়ের জন্ম। আজকে সেই দিন। ৫০ বছর আজ তার বয়স হলো। কিন্তু করোনার জন্য এক হতে পারলাম না। আপনারা স্মরণ করছেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তারই ধারণা।
৫০ পেরিয়ে ৫১ বছরে পা দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্যেষ্ঠ সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি প্রখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দম্পতির সন্তান।
পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও পরবর্তী রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় বাবা-মার সঙ্গে জার্মানিতে অবস্থান করেন জয়। পরে মা শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে আসেন ভারতে। তার ছেলেবেলা ও প্রারম্ভিক পড়াশোনা সেখানেই।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি পান। স্নাতকোত্তর করেন দেশটির হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিষয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্নের কথা বলা হয় তার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন সজীব ওয়াজেদ।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা করা হয়। গত এক যুগে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির যে বিকাশ হয়েছে তার অন্যতম কারিগরও তিনিই।
জয়ের রাজনৈতিক জীবন অবশ্য শুরু ২০১০ সালে। বাবা ওয়াজেদ মিয়ার জন্মস্থান রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ লাভের মাধ্যমে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ভালো প্রভাব তৈরি করেন। নেতৃত্ব ও প্রভাবের কারণে ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নির্বাচিত হন জয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মনোনীত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে পদক তুলে দেন। এ সময় জন প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন ও মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
জন প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সৃজনশীল কাজের অবদানের জন্য ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর ২৩ জুলাই সফল কর্মকর্তা কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয় জন প্রশাসন পদক। সেই থেকে এ দিনটি জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালে আয়োজনটি বাতিল করায় এবার ২০২০ ও ২০২১ এই দুই বছরের পদক একসঙ্গে তুলে দেওয়া হয়। ২০২০ সালের জন্য ১৫ টি ও ২০২১ সালের জন্য ২০ টি মিলিয়ে মোট ৩৫ টি পদক তুলে দেয়া হয় মনোনীত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে।
জাতীয় পর্যায়ে তিন ক্যাটাগরিতে ১৮ ক্যারেটের এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়। ব্যক্তি শ্রেণিতে এক লাখ টাকা, দলগত অবদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে শুধু পদক ও সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়।
অপরদিকে, জেলা পর্যায়ে ব্যক্তি শ্রেণিতে ৫০ হাজার টাকা ও সনদপত্র এবং দলগত শ্রেণিতে এক লাখ টাকা ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
সান নিউজ/এমএম