নিজস্ব প্রতিবেদক:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে পশ্চিমা সাত দেশের রাষ্ট্রদূতদের করা মন্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, 'রাষ্ট্রদূতদের টুইটে দেয়া অভিমত কোনো কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। '
শনিবার (৯ মে) গণমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় আবদুল মোমেন এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'পৃথিবীতে কোনো দেশে রাষ্ট্রদূতদের জটলা করে এমনভাবে বিবৃতি দিতে দেখিনি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি খুব খুশি হতাম এই রাষ্ট্রদূতেরা যদি জটলা করে বলতেন, রাখাইনে যুদ্ধ হচ্ছে-এটা বন্ধ হওয়া উচিত।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এটা কোনো কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। তাদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তবে তা প্রটোকল অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে তারা রাজনীতির মহড়ায় চলে গেছেন। তারা প্রকাশ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন। তারা কি এদেশে রাজনীতি করবেন? এ দেশে নির্বাচন করবেন? নাকি অন্য কোন কিছু?'
আবদুল মোমেন বলেন, 'এসব মতলব সুবিধার না। আমি আশা করব, তারা তাদের প্রটোকল মানবেন এবং তারা সেভাবেই কাজ করবেন। তারা জ্ঞানীগুণী জন। তারা জানেন, বোঝেন। তাদের এ ধরনের ব্যাপার প্রত্যাশিত নয়।'
প্রসঙ্গত করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর সময় নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রচার নিশ্চিত করার স্বার্থে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বৃহস্পতিবার আলাদা টুইট করেন- যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রেনসে তেরিঙ্ক, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভেরওয়েজ, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রবার্ট ডিকসন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত শার্লোট স্লাইটার ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এসট্রাপ পিটারসন।
এর আগে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার তার টুইটে লেখেন, 'সব জায়গায় জনস্বার্থ সুরক্ষায় অবাধ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রচারের সুযোগ থাকা দরকার। তাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা যেমন জরুরি, তেমনি গণমাধ্যম কর্মীর কণ্ঠও যেন রোধ করা না হয়।'
ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন টুইটে লেখেন, 'মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখাটা এখন আরও জরুরি হয়ে উঠেছে, সেই সঙ্গে গণমাধ্যমও যেন তার দায়িত্বটা পালন করতে পারে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনসে তেরিঙ্ক তার টুইটে লেখেন, 'সংকটের সময়ে এসে গণমাধ্যমের ভূমিকা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।'
জনগণের নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য পাওয়ার সুযোগ পাওয়া প্রয়োজন। গুজব যখন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, সে সময়ে গণমাধ্যম কর্মীদের অবাধে ও স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া উচিত। করোনাভাইরাস সংকটের সময়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়ার কথা উঠে আসে বাকি চার কূটনীতিকের টুইটেও।
উল্লেখ্য, সরকার সম্প্রতি মানবাধিকার কর্মী, কার্টুনিষ্ট, ব্যবসায়ীসহ চারজনকে আটক করে। গত বুধবার (৬ মে) সরকার তাদেরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতেরা শুক্রবার (৮ মে) টুইটার'এ তাদের প্রতিক্রিয়া জানান।