সান নিউজ ডেস্ক:
১০ জানুয়ারী ১৯৭২। বাঙালির স্বাধীনতার স্বাদে পরিপূর্ণতা এনে দেয়ার এক ঐতিহাসিক দিন। ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে
তাঁর আজন্ম প্রেম স্বাধীন বাংলার বুকে ফিরে আসেন।
পাকিস্তানের শাসন-শোষণ ও অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে বাঙালি জাতির মুক্তির মুক্ত হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতাকে তাঁর ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। বন্দি করা হয় পাকিস্তানের কারাগারে। মুক্তিপাগল বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধরত, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গণনা শেষে লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি।
পাকিস্তান ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বাঙালির সকল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়েই শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা এবং ভুষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে। দীর্ঘ এই আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বারবার এবং জীবনের একটা বড় সময় শেখ মুজিবকে পার করতে হয়ে কারাগারের নির্জস প্রকোষ্ঠে। হানাদারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের মহানায়ক ফিরে আসেন বিজয়ের মালা পরে। গোটা বাঙালি জাতি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিল কখন তাদের প্রিয় নেতা স্বাধীন দেশের মাটিতে এসে পৌঁছবেন। বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত রাস্তা ছিল লোকে লোকারণ্য। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের রোমহর্ষক নির্যাতন, ধর্ষণ আর গণহত্যার নির্মমতা উপলব্ধিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাবো।’
সেই থেকে প্রতিবছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা আয়োজনে আর ভালবাসায়, যথাযথা মর্যাদায় পালন করে আসছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দিনটিকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধুর এবারের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন এক আবেগে অন্যরকম এক আয়োজনে। ২০২০ বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর বছর। তাই এ বছরকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ ১০ জানুয়ারী জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকেই মুজিব বর্ষের কাউন্ট ডাউন শুরু হচ্ছে। রক্তস্নাত স্বাধীন দেশের যে স্থানে মহানায়ক তাঁর পা স্পর্শ করেছিলেন প্রথম, সেই তেজগাঁও বিমান বন্দর থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এই কাউন্ট ডাউন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি। এদিন পুরো জাতি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
সান নিউজ/ এমইপি