সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। গত নভেম্বর থেকে শুধু ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে অন্তত তিনশ ৬১ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। একাধিক সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করলেও ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সংখ্যা বেশি।
অন্য সীমান্তের তুলনায় মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে কেন অনুপ্রবেশের ঘটনা বেশি ঘটছে? এ প্রশ্নের জবাবে বিজিবি জানায়, ঝিনাইদহে সীমান্তে এলাকা রয়েছে ৫৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১১ কিলোমিটার এলাকায় কাটাতারের বেড়া নেই। ওই এলাকা দিয়েই ঢুকছে অনুপ্রবেশকারীরা।
একই সাথে দালালদের দৌরাত্ব রয়েছে সীমান্তের দুই প্রান্তেই। সীমান্তে কাটাতার না থাকায় এ সুযোগ নিচ্ছে তারা। ওই প্রান্ত থেকে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে গরুর সাথে সন্দেহভাজন ভারতীয় নাগরিকদেরও সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে দালালরা।
এ কারণে জেলার মহেশপুর সীমান্তের জুলুলী,খোশালপুর,কুসুমপুর, বাঘাডাঙ্গা,শ্যামকুড়ে সতর্ক আবস্থায় রয়েছে বিজিবি। তার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না অনুপ্রবেশ। বিজিবির টহল সরলেই প্রবেশ করছে অনুপ্রবেশকারীরা। বাংলাদেশে প্রবেশের পর অনেকে আটক হচ্ছেন বিজিবির হাতে। আর ধরা পড়ার পর নিজেদেরকে বাংলাদেশি বলে দাবি করছে তারা। সীমান্ত পারের ক্ষেত্রে দালালদের সাথে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী- বিএসএফও সহায়তা করছে বলে জানায় অনুপ্রবেশকারীরা।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল আলম সান নিউজকে জানান,আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে ৫১টি। তিনি আরো বলেন,আটককৃতদের অনেকে দাবি করেছেন,তাদের আদি নিবাস বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে এবিষয়ে কোন প্রমান দিতে পারেননি তারা। যে এলাকার বাসিন্দা বলে তারা দাবি করছেন সেখানকার কোনো জনপ্রতিনিধির নাম বা বাংলাদেশে থাকা কোনো আত্মীয়-স্বজনের ফোন নম্বরও বলতে পারেননি আটককৃতরা।
বিজিবি জানায়,যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এদের মধ্যে বেশির ভাগই মুসলমান। এরা এনআরসি আতঙ্ক ও স্থানীয় নির্যাতনে ভারত ছেড়ে এদেশে চলে আসছেন। তারা আর ভারতে যাবেন না বলে বিজিবির কাছে জানিয়েছেন। অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা করার পর আটককৃতদের সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। তবে স্থানীয়রা বলছেন,বিজিবি যে কয়েকজনকে আটক করেছে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে পরিণাম কী হবে তা ভেবে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসীন্দারা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের মতো ভারতীয়রাও আসতে শুরু করলে হুমকির মুখে পড়বে তাদের জনজীবন। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আগেই কাটাতারবিহীন সীমান্তের ১১ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে সীমান্ত বেড়া নির্মাণের দাবি তাদের।