নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানি প্রাচীনকালীন একটি ইবাদত। প্রথম মানব আদম (আ.) থেকেই এই ইবাদতের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক নিজপুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার মাধ্যমে তা ওয়াজিব তথা আবশ্যিক করা হয়।
বিশুদ্ধ মতে, মহনবী (সা.) মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর মুসলিম উম্মাহর ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর নবীজি (সা.) কখনো কোরবানির আমল ত্যাগ করেননি।
প্রতিবছর কোরবানি : মহানবী (সা.) প্রতিবছর কোরবানি করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেন। তিনি প্রত্যেক বছর কোরবানি করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৫০৭)
পরিবারের পক্ষ থেকে : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছুরি নিলেন, দুম্বাকে ধরে কাত করে শোয়ান এবং জবাই করার সময় বললেন, ‘বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ, আপনি এই কোরবানি মুহাম্মদ, মুহাম্মদের পরিবার ও তাঁর উম্মতের পক্ষ হতে কবুল করুন।’ অতঃপর তিনি দুম্বাটি কোরবানি করলেন।” (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৭৯২)
উম্মতের পক্ষ থেকে কোরবানি : পরিবারের মতো মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য কোরবানি করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও খাসি করা মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মতের যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়তের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২২)
কোরবানির পশু যেমন ছিল : মহানবী (সা.) কোরবানির জন্য দৃষ্টিনন্দন পশু নির্বাচন করতেন, যা সব বিচারেই উত্তম ছিল। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও খাসি করা মেষ ক্রয় করতেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২২)
যেসব পশু দ্বারা কোরবানি করেছেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিক পশু দ্বারা কোরবানি করেছেন। হাদিসে যেসব পশুর বর্ণনা পাওয়া যায় তা হলো—
১. গরু : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় স্ত্রীগণের পক্ষ থেকে গাভি দ্বারা কোরবানি করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৪)
২. মেষ বা ভেড়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও খাসি করা মেষ ক্রয় করতেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২২)
৩. দুম্বা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে দুম্বা কোরবানি করেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৭৯২)
৪. উট : বিদায় হজে মহানবী (সা.) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য ১০০টি উট কোরবানি করেন। যার ৬৩টি তিনি নিজে জবাই করেন আর বাকিগুলো আলী (রা.) জবাই করেন।’ (সুনানে ত্বহাবি, হাদিস : ৬২৩৬)
৫. ছাগল : রাসুলুল্লাহ (সা.) ছাগল দ্বারা তাঁর নাতি হাসানের আকিকা করেছেন এবং সাহাবিদের ছাগল দ্বারা কোরবানি করার অনুমতি দিয়েছেন। এ ছাড়া ফকিহ আলেমরা গরু প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত এবং গৃহপালিত হওয়ায় মহিষ দ্বারা কোরবানি করা বৈধ বলেছেন।
নিজ হাতে কোরবানি করতেন : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে (কোরবানির পশু) জবাই করতেন ও (উট হলে) নহর করতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৫২)
যেভাবে কোরবানি করতেন : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আয়েশা, ছুরি দাও। এরপর বললেন, এটা পাথরে ঘষে ধারালো করো। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি এটা করলাম। তিনি ছুরি নেন, দুম্বাকে ধরে কাত করে শোয়ান এবং জবাই করার সময় বলেন, ‘বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ, আপনি এই কোরবানি মুহাম্মদ, মুহাম্মদের পরিবার ও তাঁর উম্মতের পক্ষ হতে কবুল করুন।’ অতঃপর তিনি দুম্বাটি কোরবানি করলেন।” (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৭৯২)
কোরবানির গোশত খেতেন : মহানবী (সা.) তাঁর কোরবানি থেকে নিজেও খেতেন, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও অসহায় মানুষকে খাওয়াতেন। আর তিনি উম্মতকেও তার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (আউনুল মাবুদ : ৭/৩৪৫)
গোশত বিতরণ : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবারকে কোরবানির এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন, প্রতিবেশীদের এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন আর ভিক্ষুকদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সদকা করতেন।’ (আল-মুগনি : ৯/৪৪৯)
সান নিউজ/এফএআর