নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল ইদুল আজহা। তাই স্বজনদের সঙ্গে ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেষমুহুর্তেও জনসমাগমপূর্ণ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। কারও হাতে ব্যাগ, কারও মাথায় কিংবা পিঠে। কেউ কেউ শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে ঘণ্টার পড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন টার্মিনালে। রাস্তায় অসহনীয় জ্যাম, ভ্যাপসা গরম, অন্যদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। তারপরও রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষ।
এদিকে টার্মিনালে কিংবা লঞ্চে কোথাও কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। যাত্রীদের ভিড়ের কারণে নেই শারীরিক দূরত্বও। গাদাগাদি করে রাজধানী ছাড়ছেন ঘুরমুখো মানুষ। এতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও নানা ভোগান্তির কথা জেনেও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়ায় ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। ফলে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হচ্ছে না কোথাও।
মঙ্গলবার (২০ জুলাই) রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘুরে দেখা যায়, ঈদ যাত্রার শেষে মুহুর্তে হাজার হাজার মানুষ গভীর রাত থেকেই জড়ো হতে থাকেন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। অনেক যাত্রী আগেই লঞ্চে উঠে জায়গা দখল করে রাখছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচলের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কয়েকটি লঞ্চের অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হলেও ঘাট ছেড়ে যায়নি। এদিকে হাতিয়া, বেতুয়া লাইনের লঞ্চ ঘাটে না পাওয়ায় পন্টুনে যাত্রীদের ভিড় আরও বেশি বাড়ে। কেউ কেউ ভিড় ঠেলে হন্যে হয়ে খুঁজছেন নির্দিষ্ট গন্তেব্যের লঞ্চ। এতে পন্টুনে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। সেখানে মাস্ক ছাড়াই যাত্রীদের যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
এদিকে ঈদের বেশ কয়েকদিন আগে গ্রামে যেতে পারলেও ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন অনেকে। তারা বলছেন, ঈদের আগে লাখ লাখ মানুষ নানা কষ্ট আর ভোগান্তি নিয়ে ঢাকা ছাড়বে। ঈদের পরে একদিনের মধ্যে এতো মানুষ কীভাবে ঢাকায় ফিরবেন। ২৩ তারিখ থেকে ফের ‘লকডাউন’ শুরু হলে ঈদের পর দিন সবাই ফিরতে শুরু করবে। এতে বাস, লঞ্চ, ট্রেন ও ফেরিতে চাপ পড়বে। এমনিতেই করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণের মধ্যেও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। এখন বাড়ি আসা যাওয়ায় জনসমুদ্রের মধ্যে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে চলবো।
কয়েকটি লঞ্চের ভিতরে ঘুরে দেখা যায়, অনেক লঞ্চে নেই স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থা। প্রবেশমুখে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ছিটানোর নির্দেশ থাকলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তা হচ্ছে না। লঞ্চের ভেতরে যাত্রীরা একজনের গাঁয়ে লেগে আরেকজন বিছানা করছেন। অনেকের মুখে নেই মাস্ক। কেউ কেউ খোশগল্পে মেতে উঠেছেন। হকাররা ঝালমুড়ি, আম, আপেল, খেজুরসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে গিয়ে বিক্রি করছেন। তাদের কারও মুখে নেই মাস্ক। হাত পরিষ্কার না করেই খাচ্ছেন কেউ কেউ।
এদিকে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে কঠোর ‘বিধি-নিষেধ’ শিথিল করায় ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে নৌযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবে, যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৩ জুলাই সকাল থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান (লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার ও অন্যান্য) চলাচল বন্ধ থাকবে।
সানিনিউজ/ জেআই