নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় আগুনের ঘটনায় মালিক ও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকালে আগুনের সূত্রপাত হয়ে জ্বলতে থাকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত। এ ঘটনায় সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৯ জনের দেহ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। ফলে ডিএনএ টেস্ট করে মৃতদেহগুলো ফেরত দেয়া হবে স্বজনদের কাছে। কারখানায় আগুন লাগার ঘটনায় নিজেদের দায় নিতে চান না কর্ণধার মোহাম্মদ আবুল হাসেম।
কারখানাটির মালিক সজীব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসেম অবশ্য অভিযোগ স্বীকার করতে চান না। অর্ধশত মৃত্যুর দায়ও তিনি নিতে রাজি নন।
তিনি গণমাধ্যমে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এই কারখানা কম্পাউন্ডে আমরা ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। দুই হাজারের বেশি শ্রমিকের সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে। নিয়মকানুন মেনেই আমরা ব্যবসা করছি। কিন্তু শেষ জীবনে এসে বড় পরীক্ষার মুখে ফেলে দিল এই অগ্নিকাণ্ড। সেখানে আমার ম্যানেজার তো আগুন লাগায়নি। শ্রমিকদের অসতর্কতার কারণেই হয়তো আগুনের সূত্রপাত।
তবে তিনি দেশ ছেড়ে পালাবেন না বলেও জানান।
নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনে অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানের মালিককে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে মামলা হবে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ওই কারখানায় আগুন লাগার পর এরই মধ্যে ৫২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আবির হোসেন শনিবার বলেন, ফায়ার সার্ভিস এখনও ওই ভবনে কাজ করছে। আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে কারখানাটি তাদের বুঝিয়ে দেবে। ভবনটি বুঝে পাওয়ার পর মামলা করার আগে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিদর্শন করবেন।
হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানে ত্রুটিপূর্ণ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথে তালা লাগানোর বিষয়টি জানা গেছে। কারখানাটিতে শিশুশ্রমিক ব্যবহারের বিষয়টিও হয়েছে প্রকাশ্য।
কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী কারা কোন দায়িত্বে ছিলেন, তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, এরই মধ্যে মালিকসহ একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়েছে। তার ভিত্তিতে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, মামলায় দণ্ডবিধির ৩০৪, ৩০৪ (ক), ৩০৭, ধারাগুলো আসতে পারে। এসব ধারায় অবহেলাজনিত হত্যার বিষয়গুলো রয়েছে।
ডিআইজি হাবিবুর বলেন, কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি চাইলে মামলা করতে পারেন, না হলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।
সান নিউজ/এফএআর