চট্টগ্রাম ব্যূরো :
হত্যা মামালায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি পোশাককর্মী কুলসুম আক্তারের পরিবর্তে প্রায় তিন বছর জেল খেটে মুক্তি পাওয়ার ১২দিন পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু আক্তার। যদিও মিনুর ভাই রুবেল একে হত্যাকান্ড বলে দাবি তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন মিনুকে বিনামুল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া চট্টগ্রামের আইনজীবি গোলাম মাওলা মুরাদও।
এবার তারাই জানিয়েছেন, সেই মিনুর বড় ছেলে ইয়াসিন (১২) নিখোঁজ। মিনুর ভাই রুবেল বুধবার (৭ জুলাই) সকালে জানান, ইয়াসিন চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহর এলাকায় একটি দোকানে কাজ করত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই দোকানে গিয়ে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
রুবেল বলেন, ভাগিনা ইয়াসিনের খোঁজে ষোলশহর গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ইয়াসিন যে দোকানে কাজ করত সেই দোকানটি ভাঙা। দোকানের মালিকও নেই, ভাগিনা ইয়াসিনও নেই। তাদের কারও নম্বর নেই আমার কাছে। এই বিষয়ে কোনো জিডি করেছেন কি-না জানতে চাইলে রুবেল বলেন, বিষয়টি আমি আইনজীবিকে জানিয়েছি। আরও খুঁজে দেখি। না পেলে আবশ্যই জিডি করব। পুলিশকে জানাব।
রুবেল বলেন, আমার বোন মিনুকে তার স্বামী ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে ছেলেরা মায়ের কাছেই থাকত। তম্মধ্যে বড় ছেলে ইয়াসিন ষোলশহর এলাকায় একটি দোকানে কাজ করত।
এর আগে গত ২৮ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে পুলিশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে মিনুর মরদেহ দাফন করে। কিন্তু বোনের মৃত্যু স¤পর্কে রুবেল বলেন, এটি কোন সড়ক দুর্ঘটনা নয়। মনে হয় এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। যাদের কারণে আমার বোন বিনা অপরাধে জেলে ছিলেন, তারাই এই হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।
মিনুর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবি গোলাম মাওলা মুরাদও। তিনি বলেন, কারাগার থেকে মুক্তির পর মিনুকে সুস্থ স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে। পুলিশ বলছে, ভোর চারটার দিকে বায়েজিদ লিঙ্করোডে সড়ক দুর্ঘটনায় মিনু মারা গেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এত রাতে তিনি ওই জায়গায় কীভাবে গেলেন? পরিবার কেনো তার খোঁজ নেয়নি।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, বিনাদোষে মিনুর কারাগারে থাকার বিষয়টি দেশের সব গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। এটা চট্টগ্রামের বার্নিং ইস্যু, মিনুকে দেখলে যে কারও চেনার কথা। তাহলে বায়েজিদ থানার কেউ কি খবরের কাগজ পড়ে না? তাছাড়া তার মৃত্যুর কথা কাউকে না জানিয়ে কেনো গোপনে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে দিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দাফন করা হলো? পুরো বিষয়টি অন্য সবার মতো আমার কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। এসব প্রশ্নের উত্তর বের করতে একটা তদন্ত কমিটি প্রয়োজন বলে মনে করছেন আইনজীবি গোলাম মাওলা মুরাদ।
এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ২৮ জুন রাত ৩টা ৪০ মিনিটে মিনুর মৃত্যু হয়। মিনুর শরীরের আঘাত থেকে ধারণা করা হচ্ছে গাড়ির ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ সড়ক থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করে। মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিচয় বের করার সব চেষ্টা করেছি আমরা। গাড়িটিও শনাক্তের চেষ্টা করছি। কিন্তু শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি এখনও। আর পরিচয় না পেয়ে পরদিন আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে তার মরদেহটি দিয়ে দিই।
সান নিউজ/আইকে