জাহিদ রাকিব
মহামারি করোনা মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের ষষ্ঠদিন চলছে। জনসাধারণের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণে মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট থাকলেও কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না মানুষের চলাফেরা। অনেকেই রাস্তায় বেরিয়েছেন। এতে কোথাও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিশেষ করে রাজধানীর শাহবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডি, পান্থপথ এলাকায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করার মত। তবে এ সময় বেশ কিছু সড়কে আবার গাড়ি ও মানুষের যাতায়াত ছিলো সীমিত।
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সকাল থেকে ব্যক্তিগত ও রিক্সার উপস্থিত চোখে পড়ার মত। এখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট থাকার পরও সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রামপুরার বিভিন্ন গলিতে সাধারণ মানুষকে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
ধানমন্ডি ৩২ এ হাঁটাহাটি করছেন আলাউদ্দিন। এ সময় সান নিউজের সাথে তার কথা হয়। তিনি বলেন, বাসায় থাকতে ভালো লাগে না তাই রাস্তায় একটু হাঁটতে বের হয়েছি।
বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন নিয়াজ নিপু। তিনি সান নিউজকে বলেন, যেভাবে রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতি বাড়ছে, রাস্তায় রিক্সা-যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে- এটাকে কি লকডাউন বলা যায়? এরকম হলে সংক্রমণ কমবে কিভাবে?
রাজধানীর আরেক ব্যস্ততম এলাকা শাহবাগ। এখানে দুটি হাসপাতাল থাকায় মানুষের উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ে বেশী থাকে। কিন্তু জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হতে পারবে না, এমন বিধিনিষেধ থাকলেও এই এলাকায় জরুরি কাজ ছাড়া মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ে। এ সময় দেখা যায় কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করছে, আবার কেউ ডাব খাচ্ছেন।
শাহবাগ চেকপোস্টে দেখা যায় পুলিশ গাড়ি থামিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে চাইছে। প্রয়োজনে কাগজপত্রও দেখছে। জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। পাশাপাশি যারা বিনাকারণে রাস্তায় বের হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিচ্ছে পুলিশ।
চেকপোস্টে দায়িত্বরত রমনা জোনের ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. নূর নবীর সাথে কথা হয় সান নিউজের প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মানাতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমরা সাধারণ মানুষকে সচেতনতার পাশাপাশি যারা একদম কারণ ছাড়া বের হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এডিসি বলেন, এইভাবে চলতে থাকলে আমরা আরও কঠোর অবস্থানে যাবো। তিনি আরও বলেন, আমরা এত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষ যাতে বিনাকারণে রাস্তায় বের না হয়, তবু বিভিন্ন অজুহাতে বের হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এইভাবে মানুষ যদি বিনা কারণে রাস্তায় বের হয় তাহলে এইবারের ঢেউ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। আর সরকার অসহায় মানুষের খাবারের নিশ্চিত না করলে লকডাউন দিয়ে সাধারণ মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে পারবে না।
করোনাভাইরাসের উর্ধ্বমুখী সংক্রামণের প্রেক্ষাপটে গত ১ হতে ৭ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ চালু করে সরকার। এই বিধিনিষেধকে সর্বাত্মক লকডাউন বলা হচ্ছে। সোমবার এই নিষেধাজ্ঞার সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ১৪ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
তবে পোশাক রপ্তানি প্রতিষ্ঠানসহ শিল্প-কলকারখানা খোলা রাখা হয়েছে। সীমিত সময়ের জন্য খোলা রয়েছে ব্যাংকও।
সাননিউজ/জেআই/এফএআর