নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২০ সালের জানুয়ারির শুরুতে করোনা মহামারির জন্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল হয়। এতে বিদেশে মিটিং, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার মতো বৈশ্বিক ইভেন্টগুলোও স্থগিত হয়। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের খরচ মেটাতে বরাদ্দ করা প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৭০ কোটি টাকা বেশি।
এ কারণে খাতটিতে বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করা সম্ভব হয়নি। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরেও বেঁচে যায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট থেকে বিদেশ ভ্রমণের খরচ আসে। কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের ঝোঁক অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকার দরুণ প্রতি বছর এ খরচ বাড়ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সেই খরচ রুখে দিয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হয়।
গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে ভ্রমণ খাতে বরাদ্দ অর্থের ৫০ শতাংশ বাতিলের পাশাপাশি সব রুটিন ট্যুর বাতিলের অনুরোধ জানায়। এতে বলা হয়, কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজন ও অনিবার্য পরিস্থিতিতে এ অর্থ খরচ হবে।
একই দিনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেকটি পরিপত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গাড়ি কিনতে বরাদ্দ খরচ ৫০ শতাংশে নির্দিষ্ট করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দুই একজন মন্ত্রী বাদে এ সময়ের মধ্যে এ খাতে আর কারো তেমন কোনো খরচই হয়নি। ওই কর্মকর্তা জানান, গত বছরের মার্চ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনো ফাইল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেনি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি জানান, কেবল সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের একটি ফাইল ছাড়া বিদেশ ভ্রমণের আর কোনো ফাইলে তাকে সই করতে হয়নি।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, আমি নিজে চিকিৎসার জন্য তিন বার দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। কিন্তু সব খরচ আমি নিজেই বহন করেছি। এ সময়ের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও দুই একবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ভ্রমণের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার অতিরিক্ত খরচের জন্য কর্মকর্তারা এখন আর বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে আগ্রহী হচ্ছেন না।
মহামারির কারণে গতবছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক এবং বসন্তকালীন সভা ভার্চুয়ালি হয়েছে। এ সভার মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ও অর্থমন্ত্রীরা বছরে দু্ই বার একত্রিত হন। এছাড়া দেশেও বছরজুড়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভা ভার্চুয়ালি হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের ওপর তৈরি এক প্রতিবেদনেও বিদেশ ভ্রমণের জন্য বরাদ্দের বিষয়টি আলোচিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভাগ বিদেশ ভ্রমণের বরাদ্দের চাইতে কম খরচ করেছে।
সাননিউজ/এএসএম