জাহিদ রাকিব
সরকার ঘোষিত ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয়দিনে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে কড়াকড়ি আর চেকপোস্ট থাকলেও ভিতরের সড়কগুলোতে দেখা গেছে জনসমাগম।
ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে করা হচ্ছে জরিমানা। তারপরও মানুষের আনাগোনা রয়েছেই মহল্লার অলিগলিতে।
শনিবার (৩ জুলাই ) রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে চেকপোস্ট বসিয়ে জরুরি কাজ ব্যতীত বের হওয়া লোকদের অর্থদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি যাত্রাবাড়ীতে ২৫ জনকে জরিমানা করেছে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়া রাজধানীর পাড়ার অলিগলিতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে চায়ের দোকানে মানুষের জনসমাগম চোখে পড়ার মত।
লালবাগ সড়ক ধরে দু’পাশেই প্রতিটি গলিতে মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। একই দৃশ্য বেড়িবাঁধ পেরিয়ে পশ্চিম হাজারীবাগ এলাকায়ও। গ্রীণ রোডের প্রায় ভিতরের সড়কগুলোর চিত্র ছিলো একই রকম।
গ্রীণ রোডে টং দোকানে চা খাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা আলাউদ্দিন।
তিনি বলেন, লকডাউনে অফিস বন্ধ। বাসায় বসে থাকতে থাকতে বোরিং লাগে তাই একটু চা খেতে আসছি।
বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভাই এইতো বাসায় চলে যাবো।
চায়ের দোকান খোলা নিয়ে কথা হয়, রহমান মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, মামা কিছুক্ষণ পরপর পুলিশ এসে বন্ধ করে দিচ্ছে। দোকান না খুললে চলবো কি করে?
তিনি বলেন সরকার তো শুধু লকডাউন দিয়ে শেষ। আমাদের তো খাওনের ব্যবস্থা করে নাই, ঘরে খাবার নাই, তাই দোকান খুলতে বাধ্য হয়েছি।
ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার এলাকায় র্যাব-২ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে নেত্বত দেন র্যাব ২ এর সিইও।
এই সময় সেখানে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ জনসমাগম এড়াতে আমরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজ করছি। পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করছি। ধানমন্ডি এলাকায় এই পর্যন্ত ৫ ব্যক্তিকে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে আমাদের ৪০০টি চেকপোস্টের মাধ্যমে অভিযান চলছে।
পাড়া-মহল্লায় জনসমাগম নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের অভিযান চলছে। এখন থেকে আরও বেশী টহল জোরদার করবো যাতে করে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে জনসমাগম না করতে পারে।
এদিকে মৎস্য ভবন এলাকায় রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের টহল দেখা যায়।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে পুরো রমনা জোনে টহল দিচ্ছি। যেখানে মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।
অন্যদিকে শাহবাগ এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারাই রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
এই বিষয়ে কথা হয় চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট সবুজ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ যারাই জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত বাসা থেকে বের হয়েছে তারাই পুলিশ চেকপোস্টে আটকা পড়ছে। শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা ঘর থেকে বের হয়েছে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ীতে ২৫ জনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বেলা ১১টায় তাদের জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মাহনাজ হোসেন ফারিবা জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঢাকার সব জায়গায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সারাদিনে কতজনকে জরিমানা করা হলো তার তথ্য জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া যাবে। আমরাও বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করছি। যাত্রাবাড়ীতে আমরা ২৫ জনকে জরিমানা করেছি।
তিনি বলেন, মাস্ক না পরা, বিধিনিষেধ অমান্য করে বের হওয়া, গণপরিবহন বন্ধ থাকা সত্তে¡ও বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে লোক নেয়ায় অনেক গাড়ি ও পিকআপ চালককে জরিমানা করেছি। সামনে আরও কয়েকটি পয়েন্টে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।
কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে গত বুধবার (৩০ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ২১টি শর্ত যুক্ত করে এই বিধিনিষেধ আরোপের হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
সাননিউজ/জেআই/এফএআর