নিজস্ব প্রতিবেদক:
গণমাধ্যমের অবাধ ও মুক্ত ভূমিকা পালনে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ২ মে শনিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছে টিআইবি।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ উদ্ভূত জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সংকটকালীন সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখা নিশ্চিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কোভিড-১৯ মহামারিকে দুর্নীতির মহোৎসবে পরিণত করার পাঁয়তারায় যারা লিপ্ত, তাদের অশুভ তৎপরতা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম শক্তি হতে পারে মুক্ত গণমাধ্যম। শুধু স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ নয়, এই দুর্যোগের প্রেক্ষিতে জরুরিভিত্তিতে অতীব প্রয়োজনীয় বহুমুখী সরকারি ক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রকার যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের সম্পদ বিকাশের সুযোগ গ্রহণকারীদের নিবৃত্ত করতে তথ্যের অবাধ প্রকাশের বিকল্প নেই। আর এক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের অবারিতভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যর্থতা আত্মঘাতী হবে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা হয়রানি নয়, বরং দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
ত্রাণ বিতরণে জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের একাংশের দুর্নীতি, তার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশের সংশ্লিষ্টতার সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা, হয়রানি ও নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ হচ্ছে। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিবর্তনমূলক নজরদারি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা, হুমকি-ধামকির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখা ও সাংবাদিকদের সেল্ফ সেন্সরশিপে বাধ্য করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে গভীর হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। টিআইবির মতে, চলমান দুর্যোগের কার্যকর মোকাবিলার স্বার্থে এ আত্মঘাতী চর্চাগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের গণমাধ্যম নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। করোনা দুর্যোগেও এর ব্যতিক্রম হয়নি বরং অভাবিত এ সংকটে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করেই নাগরিকদের বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতে ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ফ্রন্টলাইনে গণমাধ্যমকর্মীরা সাহসী ভূমিকা পালন করছেন এবং অনেকেই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২০-এর প্রতিপাদ্য ‘ভয় বা পক্ষপাতিত্ববিহীন সাংবাদিকতা’-এর যথার্থ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। তাদের আমরা অভিনন্দন জানাই এবং একইসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের এ সাহসী ভূমিকা অব্যাহত রাখতে গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ ও এর কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ও নিয়মিত বেতনভাতার পাশাপাশি আপৎকালীন ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
চলমান দুর্যোগে সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সংবাদ সংগ্রহকালে ও প্রকাশের জেরে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হয়রানি, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগসহ বিভিন্নভাবে মামলার সংবাদে হতাশা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. জামান বলেন, ধারণাতীত এ দুর্যোগের সময়ে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা কোনোভাবেই কাম্য নয়, বিশেষ করে যখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবাধ ও সঠিক তথ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সরকারকে মনে রাখতে হবে সঠিক তথ্যের অভাবে শুধু জনগণ বিভ্রান্ত হবে তা-ই নয়, বরং দুর্যোগ ও এর প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন আত্মঘাতী ও অসহনীয় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তথ্য সংগ্রহ ও সংবাদ প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের অনতিবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতার আওতায় এনে গণমাধ্যম-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারকে সচেষ্ট হবার জোর আহ্বান জানাই।
বিবৃতিতে একইসঙ্গে নৈতিকতা, বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সকল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানায় টিআইবি।
সান নিউজ/সালি