নিজস্ব প্রতিবেদক: কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখে অর্থবিল-২০২১ পাস করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনার ওপর আনিত সংশোধনী নিয়ে আলোচনার পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অর্থবিল পাস করার জন্য সংসদ সদস্যদের কাছে কণ্ঠভোট আহ্বান করলে সংসদজুড়ে 'হ্যাঁ' শব্দ শোনা যায়। 'না'- এর পক্ষে কেউ ভোট দেননি।
সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা বহু দূর যেতে চাই। সারা বিশ্বের অর্থনীতি পাল্টে গেছে, লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি যখন এমন করুণ, সে অবস্থাতেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অতটা খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
তিনি বলেন, এ বছরের বাজেট দেশের মানুষের জন্য। তাই, সব জেনে-শুনেই আমরা কঠিনকে ভালোবেসেছি। আশা করি, এবারের বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষম হব।
এর আগে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন। সরকারি ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা অর্থ বিলের বিভিন্ন অংশে সংশোধনের প্রস্তাব তুলে ধরে বক্তব্য দেন। সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশিদ, মুজিবুল হক, মশিউর রহমান রাঙার কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে এগুলো ভোটে দিলে তাও কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এদিকে কালো টাকা সাদা করলে অর্থের উৎস নিয়ে দেশের কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না- এমন সুযোগ দিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে আয়কর আইনে দুটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়, যার মেয়াদ শেষ হবে ৩০ জুন। গত ৩ জুন আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। অর্থবিলেও এর সংশোধন বা চলমান রাখার প্রস্তাব ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করহার বাড়িয়ে এবং নতুন একটি সুযোগ দিয়ে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন না করার বিশেষ সুবিধা রাখা হলো।
যেখানে সংশোধন: চলতি অর্থবছরে শেয়ার, বন্ডসহ পূঁজিবাজারে লেনদেন যোগ্য যে কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে ১০ শতাংশ কর দিলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। আগামী অর্থবছরে এক্ষেত্রে করহার ২৫ শতাংশ এবং করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা করে কালো টাকা সাদা করা যাবে। জমি, ভবন ও ফ্ল্যাটে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চলতি অর্থবছরে ছিল। একই পরিমাণ কর রেখে যা আগামী অর্থবছরে অব্যাহত রাখা হয়েছে।
নগদ অর্থ, ব্যাংকে জমা রাখা অর্থ এবং সঞ্চয়পত্রসহ যে কোনো ধরনের অপ্রদর্শিত সঞ্চয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ ছিল। আগামী অর্থবছরে এ সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে করহার বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং করের ওপর আরও ৫ শতাংশ জরিমানা আরোপের বিধান করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে নতুন একটি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কোনো নতুন কারখানায় বিনিয়োগ করলে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে। আর সবক্ষেত্রেই আয়কর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকবে না।
গত ৩ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর দুই দিনের আলোচনা শেষে ৭ জুন সম্পূরক বাজেট পাস এবং ১৪ জুন থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়।
সংসদের চলতি অধিবেশন শুরু হয় ২ জুন, যা আগামী ১ জুলাই শেষ হবে। করোনা মহামারির কারণে গত বছর মাত্র ৯ কার্যদিবস চলে বাজেট অধিবেশন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন।
সাননিউজ/এফএআর