নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদে অর্থবিল-২০২১ পাস করা হচ্ছে মঙ্গলবার (২৯ জুন) । থাকছে ‘কালো’ টাকা সাদা করার সুযোগ। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন।
পুঁজিবাজার, ফ্ল্যাট, জমি, ব্যাংক ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্রসহ আরো কয়েকটি খাতে এই অর্থ আগামী অর্থবছরেও বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাজেট ঘোষণার পর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকা নিয়ে সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রীকে একাধিকবার জিজ্ঞেস করেছেন। প্রতিবারই তিনি ‘কালো টাকা’ না বলে ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন, বিভিন্ন কারণে অনেকেই অতিরিক্ত অর্থের হিসাব দিতে চাননা। ফলে ওই অর্থ অপ্রদর্শিত হয়ে যায়। এই অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার জন্যই বিশেষ নিয়মে সুযোগ দেওয়া হয়। তবে এ বছর ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে কিনা তা জানতে ২৯ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সর্বশেষ গত শনিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে তিনি একই কথা বলেন।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের মতো মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে ‘কালো টাকা’ বিনিয়োগের সুযোগ আর রাখা হচ্ছে না। শুধু উৎপাদন খাত বা যে খাতে বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, সেই খাতে আগের মতো ১০ ভাগ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। বাকি অন্যান্য খাতে এই অর্থ বিনিয়োগ করতে হলে প্রদেয় করের সঙ্গে পাঁচ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে।
সূত্র জানায়, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি অর্থ বিলে স্পষ্ট করার কথা রয়েছে। আর অর্থ বিলে উল্লেখ না থাকলেও এসআরও জারি করে চূড়ান্ত বাজেটে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আগামী অর্থবছরে আয়কর অধ্যাদেশে সংশোধনী এনে পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে। বিনিয়োগ করা কালো টাকার উৎস নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
অর্থ বিলে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে হোটেল-রেস্তোরাঁর ওপর আরোপিত ভ্যাটের হারও কমিয়ে আনা হতে পারে। কমানো হতে পারে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারের ওপর করপোরেট করের হারও।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার অনেকটা ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই সুযোগের আওতায় যে কেউ তাদের অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজার, ফ্ল্যাট, ব্যাংক আমানত সঞ্চয়পত্রে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করতে পারতেন। এই সুযোগটি কাল বুধবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে জানা গেছে সুযোগটি আগামী অর্থবছরের জন্যও দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রগুলো জানায়, এক বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সুযোগটি দেওয়া হয়েছিল। তখন পুরো অর্থবছর করোনায় ছিল টালমাটাল। অর্থনীতি হয়ে পড়েছিল অনেকটা স্থবির। এই স্থবিরতা কাটাতে এবং অপ্রদর্শিত অর্থ মূল অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনার জন্য মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে বৈধতার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে। অর্থনীতির গতি স্বাভাবিকের দিতে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মহলের চাপ রয়েছে। ফলে অদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আরো এক বছরের জন্য বহাল রাখা হচ্ছে। তবে শুধু গতবারের ১০ শতাংশ কর নয়, এর সঙ্গে জরিমানা দিয়েই বিনিয়োগ করা যাবে।
সূত্র জানায়, নতুন নিয়মে প্রযোজ্য করহার এবং তার সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে টাকা বৈধ করা যাবে। প্রযোজ্য হার মানে হলো ব্যক্তিভেদে সর্বনিম্ন হার ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। নতুন নিয়মে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু শর্ত কঠোর করা হয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে এই সুযোগ নিয়ে কেউ এক বছর পর্যন্ত ‘লকইন’ না রাখলে তাকে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করতে হবে।
জানা গেছে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভ্যাটের হার কমানো হচ্ছে। এখন হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভ্যাট আদায়ে দু’টি স্তর আছে। একটি হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ এবং নন-এসি সাড়ে ৭ শতাংশ। করোনাকালে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য ভ্যাটের হার কমানো হচ্ছে।
জানা গেছে, সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার হোটেল-রেস্তোরাঁ আছে। এর সঙ্গে জড়িত শ্রমিক সংখ্যা ২২ লাখের বেশি। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় এই সেবা খাতের ভ্যাট হার কমানো হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেল-রেস্তোরাঁর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং নন-এসির ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে।
সূত্র জানায়,নতুন বাজেটে বিকাশ, নগদসহ অন্যদের মোবাইল সেবায় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন করার প্রস্তাব করা হয়। এটি সংশোধন করে দুই লাখ টাকায় উন্নীত করা হতে পারে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ওপর করপোরেট করও কমানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
সান নিউজ/এসএম