নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘লক’ কিংবা ‘শাট’ যে নামেই হোক, করোনার ভয়াবহতায় ডাউন নেই। মৃত্যু, আক্রান্ত ও শনাক্তের হার ‘আপ’ই হচ্ছে। পরিস্থিতির অনিবার্যতায় লকডাউন আর না দিয়ে শাটডাউনের কথা এসেছিলো। পরে এলো লকডাউনের সিদ্ধান্তই। সেখানেও সিদ্ধান্তের বদল। বলা হয় বৃহস্পতিবার থেকে দেয়া হবে কঠোর লকডাউন। তবে সিদ্ধান্তের আপ-ডাউনে হঠাৎ করেই রোববার সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত হয় সোমবার থেকে লকডাউনই শুরু হবে সীমিত করে। আর বৃহস্পতিবার থেকে সর্বাত্মক। সোমবার (২৮ জুন) সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই বিধি-নিষেধ, চলবে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার(২৭ জুন) নতুন ৫টি শর্ত দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শর্তে যুক্ত হয়-
১. সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
২. সব শপিংমল, মার্কেট, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৩. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (শুধুমাত্র অনলাইন/টেক ওয়ে) করতে পারবে।
৪. সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেওয়া করতে হবে।
৫. জনসাধারণকে মাস্ক পরার জন্য আরো প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আর দফায় দফায় সিদ্ধান্তের এই আপ-ডাউনে ভোগান্তিতে জনগণ। বিশেষ করে অফিসগামী মানুষ যেনো সোমবার সকাল থেকে দিশেহারা।
গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। অফিসগুলোকে তাদের কর্মী আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হলেও সময়ের অভাবে বহু প্রতিষ্ঠানই তা করতে পারিনি। ফলে অফিসগামীদের মাঝে আবারও পূর্বের ন্যায় ভোগান্তি ।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে অফিসগামী যাত্রীদের ভিড়। কিন্তু কোথাও বাস নেই সিএনজিও কম একটি সিএনজি এলেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে তার ওপর। ভাড়া ও দ্বিগুণের দ্বিগুণ। যে রিকশাগুলো চলছে সেগুলোর ভাড়াও বেশি। আবার কেউ কেউ রওনা দিয়েছে হেঁটেই।
রাজধানীর মতিঝিল, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, নীলক্ষেত, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, আসাদগেটসহ বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের গণপরিবহনের অভাবে দুর্ভোগে পড়তে দেখা গেছে।
যাত্রীদের সাথে কথা হলে অনেকে জানান, করোনার প্রার্দুভাব বাড়ছে তাই সরকার আমাদের কথা চিন্তা করেই নানামুখী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো সমন্বয়হীনতায়। এই ইচ্ছা হলো কয়েক ঘণ্টার নোটিশে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। আবার অফিস খোলা রেখেছে। এটার কোনো অর্থ খোঁজে পায় না । আমরা সাধারণ মানুষ আসলে কর্তৃপক্ষের চিন্তার ও সমন্বয়হীনতার বলি।
উল্লেখ্য, এর আগে করোনা পরিস্থিতিতে সীমান্তের জেলাগুলোতে লকডাউন দেয়া হচ্ছিলো। সর্বশেষ গত ২২ জুন থেকে ঢাকার আশেপাশের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ-এই সাত জেলায় কঠোর লকডাউন (বিধিনিষেধ) দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় ঢাকার সঙ্গে বাস, লঞ্চ ও রেল যোগাযোগ।
ভুক্তভোগী জনগণ এখন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানতে চেয়েছে, দফায় দফায় এমন লকডাউনের সঠিক সিদ্ধান্ত আসলে কোনটা। জনগণ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন একটি ভোগান্তিহীন সিদ্ধান্তেরও।
সান নিউজ/ আরএস