জাতীয়

‘সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই আ.লীগরে লক্ষ্য’

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্যই হলো দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ এবং বাঙালিদের বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস দলের মধ্যে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো ও গণতন্ত্রের চর্চা অটুট থাকলে কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বানও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শত প্রতিকূলতার পরেও দলকে মজবুত ভিত্তিতে দাঁড় করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে আমাদের সকল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা শত প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আজ অত্যন্ত মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালির মুক্তি এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ শে জুন এক সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

‘দলটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করা, বিশ্বের মুসলমানদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব জোরদার এবং বিশ্ব শান্তির পথকে প্রশস্ত করা।

‘কারাবন্দি অবস্থায় তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব নবগঠিত সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং সাংগঠনিক তৎপরতার জন্য ১৯৫৩ সালের নভেম্বরে দ্বিতীয় সম্মেলনেই তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।’

বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ৬২-এর ছাত্র আন্দোলন, ৬৪-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি মুক্তির সনদ রচনা এবং ৬৯-এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসন অবসানের প্রতিশ্রুতি অর্জন দলটিকে মুক্তিকামী মানুষের আশ্রয়স্থলে পরিণত করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেখ মুজিবের নেতৃত্বের জন্য আওয়ামী লীগকে ৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব-বাংলার মানুষ তাদের মুক্তির ম্যান্ডেট দিয়েছিল। জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদে দলটি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জনগণের এ রায়কে উপেক্ষা করে, শুরু করে প্রহসন। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সকল সংসদ সদস্য ছয় দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের শপথ গ্রহণ করেন।’

তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরপরই জান্তা সরকার জাতির পিতাকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে প্রেরণ করে।

‘তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণশক্তি। তার অবিচল নেতৃত্বে বাঙালি জাতি মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যায়।’

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। ১২ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধানে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করেন।

‘১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভ করে পুনরায় সরকার গঠন করে। জাতির পিতার আহ্বানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশসমূহ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। অতি অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং মাত্র সাড়ে তিন বছরেই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী চক্র আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করে। বিদেশে থাকায় আমি এবং আমার বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যাই।

‘২৬ সেপ্টেম্বর দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে। ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। মোস্তাক-জিয়া চক্র খুনিদের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। তারা মার্শাল ল জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে পাকিস্তানি কায়দায় দেশ শাসন করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশে থাকা অবস্থায় ৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে। প্রায় ছয় বছর রিফিউজি জীবন শেষে ৮১ সালের ১৭ মে আমি দেশে ফিরে এসে দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করি।

‘সারা দেশে প্রান্তিক মানুষের দুঃখ-দুর্দশা চিত্র স্বচক্ষে অবলোকন করি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সংগঠিত করি। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে স্বৈরাচারী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পরাজিত করে সরকার গঠন করে। একই বছরে ১২ নভেম্বর ‘দায়মুক্ত অধ্যাদেশ বাতিল আইন-১৯৯৬’ সংসদে পাশ করে। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়।’

দেশ গঠনে আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত সাড়ে বারো বছরে আমরা উন্নয়নের সকল সূচকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

‘আমরা দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। আমাদের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর। ৯৯ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিচ্ছি। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘সড়ক, রেল, বিমান ও নৌ ও সমুদ্র যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করেছি। দেশকে আমরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ রূপান্তরিত করেছি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ছাড়িয়েছে।

‘বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশিতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছি। রূপকল্প-২০২১ এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি।’

সরকারে ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমরা অঙ্গীকার করেছি কেউ গৃহহীন থাকবে না। শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে দেব। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি।

‘২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ গ্রহণ করেছি।’

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নলছিটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির নলছিটিতে শুরু হয়েছে ভূট্টো স্মৃত...

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহ...

বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে জ...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃ...

ডেঙ্গুতে একদিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জনের মৃত...

অটোরিকশার বিষয়ে যে বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অটোরিকশা সম...

পেপার মিলে অগ্নিকাণ্ড, দগ্ধ ১১

জেলা প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি পেপার মিলে অগ্...

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, নিহত ২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবারপাখ...

আমরা সব লিপিবদ্ধ করে যাবো

বিনোদন ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা