নিজস্ব প্রতিবেদক: একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর সড়কে শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়েছে। ঢাকার বাইরেও বসানো হয়েছে কয়েকটি জেলায়। ‘পিপ দ্য প্লেস’ নামের অ্যাপসে যুক্ত হয়েছে এসব ক্যামেরা। এই অ্যাপসের মাধ্যমে যে কেউ ক্যামেরার আওতায় থাকা সড়কের তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি দেখতে পারবেন। পাওয়া যাবে লাইভ স্ট্রিমিং ও ছবি। এসব সেবা পেতে লাগবে সাবস্ক্রিপশন ফি।
প্রতিষ্ঠানটির কর্তাদের দাবি, শুধুমাত্র সড়কের পরিস্থিতি জানানোর উদ্দেশ্য ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছে। কিন্তু এর অপব্যবহারও হতে পারে ভয়াবহ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ক্যামেরার কারণে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কাছে এ ধরনের কার্যক্রম থাকলে জননিরাপত্তা এবং প্রাইভেসি ঝুঁকিতে পড়বে।
কোনো দুর্বৃত্ত এসব ক্যামেরার সাহায্যে সহজেই যে কাউকে অনুসরণ করতে পারবে। গতিবিধি অনুসরণ করে ক্ষতি করতে পারবে। এছাড়া ভিনদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এই ক্যামেরার সাহায্যে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি করতে পারে। তাই অনুমোদনহীনভাবে সিসি ক্যামেরা বসানোর কার্যক্রম গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশে প্রাথমিকভাবে দুই শতাধিক ক্যামেরা বসায়। কারিগরী ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণ কারণে কিছু ক্যামেরা অচল হয়ে পড়ে। বর্তমানে শতাধিক ক্যামেরা চালু রয়েছে।
ঢাকার মধ্যে প্রগতি সরণি, কুড়িল ফ্লাইওভার, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ, টঙ্গী, বাংলামোটর, মিরপুর-১৪, মালিবাগ রেলগেট, আদাবর, ৩০০ ফিট রোড, মিরপুর-২, আবদুল্লাহপুর, মণিপুর স্কুল, সাত মসজিদ রোড, শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মিরপুর-১, আনসার ক্যাম্প, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড, কাজীপাড়া, টেকনিক্যাল, মেরুল বাড্ডা, অফিসার্স ক্লাব, কলেজ গেট, রাজমণি সিনেমা হল, শ্যামলী বাসস্টপ, পান্থপথ ক্রসিং, বেতার ভবন, মোহাম্মদপুর বাসস্টপ, কাজীপাড়া, পুরাতন রমনা থানা, ফার্মগেট, লালমাটিয়া, নবাবপুর রোড, ধানমন্ডি-২৭, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার, তোপখানা রোড, খিলক্ষেত, কৃষি মার্কেট, বাড্ডা লিংক রোড, মোহাম্মদপুর টাউন হল, শ্যামপুর, মিরপুর চিড়িয়াখানা, ৬০ ফিট রোড, স্কয়ার হাসপাতাল, শ্যামলী রিং রোড, এমইএস, জাপান গার্ডেন সিটি, মানিক মিয়া মোড়, মগবাজার ওয়্যারলেস, রাসেল স্কয়ার, মহাখালী, গুলিস্তান, বেইলী রোড, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, গাবতলী বাসস্টপ, সবুজবাগ, উত্তরা জসীম উদ্দীন, নিকুঞ্জ, মিরপুর সাড়ে ১১, শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন মোড়, কমলাপুর, আসাদ গেট এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
এছাড়া ঢাকার বাইরে ভোগড়া বাইপাস, কাঁচপুর ব্রিজ, গাজীপুর চৌরাস্তা, বোর্ড বাজার, চিটাগাং রোড, গাজীপুরা বাসস্টপ, সাইনবোর্ড, চাষাঢ়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে পিপ দ্য প্লেস।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজধানীর সড়কে সিসি ক্যামেরা লাগানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। স্থানীয় কোন থানা অনুমতি দিয়েছে কিনা সেটি খোঁজ নেওয়া হবে।
পিপ দ্য প্লেসের উদ্যোক্তা ইঞ্জিনিয়ার মোহছিয়ুল হক বলেন, বর্তমানে যানজট একটি বড় সমস্যা। প্রযুক্তি ব্যবহার করে যানজট এড়ানো সম্ভব। এই অ্যাপসের মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই রাস্তার তাৎক্ষণিক অবস্থা জানতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি আইনগত বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান। আমরা বছর দেড়েক আগে কার্যক্রম শুরু করেছি। যেহেতু পরীক্ষামূলকভাবে ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছে তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
গুগল প্লে স্টোরের তথ্য অনুযায়ী, এক লাখের বেশি মানুষ পিপ দ্য প্লেস অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন। অ্যাপটি ব্যবহার করতে ব্যবহারকারীকে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
সান নিউজ/এমআর