নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রায় সবকিছু স্থবির থাকলেও আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ ঠিকই চলছে। আগামী ১১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো। তবে শেষ মুহূর্তে এ আকার আরও বাড়তে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজেট প্রণয়নের মূল কাজটি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ বিভাগের কর্মচারীরা তা ভোগ করতে পারছেন না। তবে বাজেটকে অংশীদারিমূলক করতে প্রতি বছর যে প্রাক্-বাজেট আলোচনা হয়, এবার করোনার কারণে সেটি হয়নি।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এরিমধ্যে তা সংশোধন করে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। বরাবরই বাজেটের একটি বড় অংশজুড়ে থাকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)।
আগামী বাজেটেও এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় তা মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে করোনাভাইরাসের কারণে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, আগামী বাজেটের সবকিছুর সঙ্গেই করোনার প্রভাবকে বিবেচনায় রাখা হবে। অতি জরুরি খাত ছাড়া অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে না।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও এরই মধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত বেশি গুরুত্ব পাবে এবং তারা যেন এই দুই খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো মাথায় রেখেই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পাঠায়।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, ৫ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরে নিয়ে আগামী বাজেট প্রণয়নের কথা ভাবা হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার কথা চিন্তা করা হয়। করোনার নেতিবাচক প্রভাব সব খাতে পড়ায় শেষ পর্যন্ত বাজেটের আকার কম ধরা হচ্ছে।
নতুন বাজেট করতে গিয়ে অর্থ বিভাগের বড় চিন্তা রাজস্ব সংগ্রহ নিয়ে। চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ অনুমান করছে, জুন শেষে সরকার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব কম পাবে।
এদিকে রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় বাড়বে বাজেট ঘাটতিও। বরাবরের মতো বাজেট ঘাটতি এবার আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যে থাকছে না। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব ও উত্তরণের পরিকল্পনা’ শীর্ষক একটি ধারণাপত্র তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি হবে। সে হিসাবে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ওই ধারণাপত্রে অবশ্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ রাখা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাক্-বাজেট আলোচনা না হওয়ায় আগামী বাজেটের জন্য দেশের সরকারি-বেসরকারি সব গবেষণা সংস্থা, অর্থনীতিবিদ, চিন্তাবিদ, সাবেক অর্থসচিব এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা শিক্ষকদের কাছ থেকে লিখিত পরামর্শ চেয়েছে অর্থ বিভাগ। এ বিষয়ে অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার ২১ এপ্রিল ৫০ জনের কাছে একটি অভিন্ন চিঠি পাঠান।
সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য পরিষেবাসহ শিল্প উৎপাদন, রপ্তানি বাণিজ্য, সেবা খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে করোনাভাইরাস। শুধু সরবরাহ নয়, ভোগ ও বিনিয়োগ চাহিদাও কমতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে যে বিশ্বমন্দা শুরু হয়েছে।’
করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করে আগামী ৫ মের মধ্যে তাদের মতামত অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। এ মতামত আগামী বাজেট প্রণয়নে ভূমিকা রাখবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।