নিজস্ব প্রতিবেদক : অধিক কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রস্তাবিত বাজেটে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কর প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় ব্যাপক কর ছাড়ের সুবিধা দেয়ার কথা বলেছেন প্রস্তাবিত বাজেটে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মেগা শিল্পে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ন্যূনতম ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে স্থাপিত অটোমোবাইল (থ্রি হইলার ও ফোর হইলার) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ২০ বছর কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘দেশে মেগা শিল্পের বিকাশ এবং আমদানি বিকল্প শিল্পোৎপাদনকে ত্বরান্বিত করার স্বার্থে মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর।
‘এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে অটোমোবাইল-থ্রি হুইলার এবং ফোর হুইলার উৎপাদনকারী কোম্পানিকে শর্ত সাপেক্ষে ২০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করছি। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশীয় উৎপাদকরা উৎসাহিত হবে।’
দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় কর অবকাশ সুবিধার প্রস্তাবে নতুন বাজেটে স্থানীয় শিল্প, হাসপাতাল, অটোমোবাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত, গৃহস্থালি সরঞ্জাম শিল্প স্থাপন করলে ১০ বছর কর সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কর অবকাশের আওতা বাড়ানো হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার বাইরে ২৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল ও ক্লিনিক বানালে ১০ বছর পর্যন্ত কোনো কর দিতে হবে না। এ ছাড়া নতুন অটোমোবাইল শিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাত ফল, দুগ্ধ উৎপাদন শিল্পকে একই সময়ের জন্য কর সুবিধা দেয়া হয়েছে।
গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত ঘরের সরঞ্জাম (হোম অ্যাপ্লায়েন্স) যেমন: রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক সেলাই মেশিন, কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স ও ব্লেন্ডার শিল্প স্থাপন করলে ১০ বছরের জন্য কোনো কর দিতে হবে না।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির ২২টি খাত করমুক্তির সুবিধা পাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে আরও ছয়টি খাতকে করমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো ক্লাউড সার্ভিসেস, সিস্টেম ইন্ট্রিগ্রেশন, ইলানিং ফ্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশনস, মোবাইল অ্যাপস ও আইটি ফ্রিলেন্সিং।
কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে মানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকারকে কোনো আয়কর না দেয়া। এরপর কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রযোজ্য হারে বার্ষিক মুনাফার ওপর কর দিতে হয়। একে করপোরেট কর বলা হয়।
দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এ সুবিধা দেয় সরকার।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা।’
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার ফলে উল্লিখিত খাতে নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে।’
বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭৪ সাল থেকে কর অবকাশ সুবিধা চালু রয়েছে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে আদেশ (এসআরও) জারি করে প্রয়োজন মোতাবেক বিভিন্ন খাতে কর অবকাশ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার।
আগে ঢালাওভাবে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হতো। কিন্তু এ সুবিধার ব্যাপক অপব্যবহার ফলে নীতি-সহায়তায় পরিবর্তন আনা হয়।
বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে কিছু খাতে সম্পূর্ণ করমুক্ত সুবিধা এবং কিছু ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত হারে (বিদ্যমান হারের চেয়ে কম) কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার নিয়ম চালু রয়েছে।
বর্তমানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ভৌত অবকাঠামোসহ শতাধিক খাত কর অবকাশ সুবিধা ভোগ করছে। প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে ওই সব শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হলো।
কর অবকাশ ছাড়াও কর হ্রাস, কর ছাড়সহ বিভিন্নভাবে শিল্প খাতে প্রণোদনা দেয়া হয়। এসব সুবিধা দেয়ার ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।
কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই এনবিআরের কাছে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ২০১১ সালে এ বিষয়ে একটি জরিপ করেছিল। তাতে দেখা যায়, কর সুবিধায় দেয়ার ফলে ওই বছর কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছিল।
আইএমএফ মনে করে, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এ দেশে কর সুবিধা বেশি দেয়া হয়।
কর সুবিধার বড় একটি অংশ অপচয় হয় বলে মনে করে আন্তর্জাতিক এই ঋণদানকারী সংস্থাটি। সে জন্য কৃষিসহ বেশির ভাগ খাতে কর সুবিধা বাতিলের পক্ষে সুপারিশ করে আইএমএফ, যদিও সরকার তা গ্রহণ করেনি।
সান নিউজ/এম