নিজস্ব প্রতিনিধি: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন ,সরকারের পর্যাপ্ত পদক্ষেপের পরও টিকা নিয়ে আকাশে কালো মেঘ আছে এবং তা সরছে না।
রোববার (২৩ মে) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯: লিংকিং ইকোনমিক অ্যান্ড হেলথ কনসার্ন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক (ডিজি) বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। গেস্ট অব অনার ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ।
প্যানেল আলোচক ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডিজি মীরজাদী সেব্রিনা খান ফ্লোরা, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, টিকা নিয়ে কিন্তু কালো মেঘ আকাশে আছে, সরছে না। এটা আমার নিজস্ব কথা, সরকারের কথা না। এর কতগুলো বাস্তব কারণও আছে। এটা দূর করতে হবে। যদিও সরকারের উচ্চ মহল আশ্বস্ত করেছে। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বলেছেন। আমাদের পুরোনো বন্ধু রাশিয়া থেকেও টিকা আনার প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, টিকা একটা বিগ ম্যাটার। যদি হার্ড ইমিউনিটি করতে হয়, তবে সবাইকে টিকা দিতে হবে। না হলে হবে না। অনেকে সেকেন্ড ডোজ নিয়ে আনসার্টেইনেটিরির মধ্যে রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এক ডোজ টিকা নিলেও প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে, এটা কিছুটা হলেও ভালো কথা। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমার মনে হয় মুখ্য অস্ত্র আইসোলেশন। তবে জীবন ও জীবিকার প্রশ্নও রয়েছে। তাই এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো দেশ তাদের প্রয়োজনের তুলনায় তিন গুণ-চার গুণ বেশি টিকা স্টক করে রেখেছে। আর অন্যরা ১ শতাংশ টিকাও পাচ্ছে না। এটা ঠিক না।
স্বাস্থ্য খাত নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘাটতি ছিল। স্বাস্থ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। এ খাতে বরাদ্দ কম ছিল, দেয়া হয়েছে। তবে টাকা দিয়ে হয় না। অনেকের টাকা খরচ করার সক্ষমতাও নেই। সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত টাকা দেয়া হয়েছে। এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দুটি প্রকল্পও রয়েছে। আমরা এগুলো দ্রুত অনুমোদন করে দিয়েছি। কিন্তু পরবর্তী কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।
সভাপতির বক্তব্যে বিনায়ক সেন বলেন, ভারতের করোনা পরিস্থিতি যদি আমাদের দেশেও হয়, তাহলে কী হবে? আমাদের যদি আগস্টে বা তার আগে-পরে তৃতীয় ঢেউ আসে। তখন কী হবে? আমাদের স্বাস্থ্য খাতের কি সেই জরুরি মুহূর্ত মোকাবিলার সক্ষমতা রয়েছে? দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের কী হবে? আগামী ছয় মাসে আমাদের তিন কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। আমরা কি চাহিদামতো ভ্যাকসিন ইমপোর্ট করতে পারব? ভ্যাকসিন কো-প্রোডাকশনে যেতে পারব? এসব প্রশ্ন থেকেই যায়।
মসিউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দেশের যে জনসংখ্যা, তাতে আমদানি করে সবার টিকা নিশ্চিত করা সম্ভব না।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত টেস্টিং। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম করোনা টেস্ট হয়েছে বাংলাদেশে। ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের বাস্তাব চিত্র করোনার কারণেই সামনে এসেছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাত কতটুকু ভঙ্গুর, কতখানি নাজুক, সেটা কোভিড বিপর্যয়ের ফলে স্পষ্ট হয়েছে। সেটা অদক্ষতার কারণেই হোক, অনিয়মের কারণে হোক।
আনির চৌধুরী বলেন, প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে কতজনের টেস্ট হচ্ছে এবং এতে কত পজিটিভ হচ্ছে, তা ট্র্যাক করা হচ্ছে। যারা একবার কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রতিরোধক্ষমতা কতটা তৈরি হচ্ছে বা কতজন আবারও আক্রান্ত হচ্ছেন, তাও ডেটা আকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ফ্লোরা বলেন, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মানে সামাজিক সমাবেশ থেকে, গণজমায়েত থেকে বা কোনো বড় অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকা। এটা মানতে হবে। জনপ্রতিনিধিসহ যারা ত্রাণ বিতরণ করেন, তাদের মাস্ক না পরে স্বাস্থ্যবিধি না মানতেও দেখা যায়।
সাননিউজ/এএসএম