নিজস্ব প্রতিবেদক : সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে কোর্ট ঘেরাও করতে বললেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং মাওলানা ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
শনিবার (২২ মে) বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে শাহাবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে মুক্তি ও নির্যাতনকারীদের বিচার এবং উপনিবেশিক অফিসিয়াল সিক্রেট এক্ট ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাবেশ থেকে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সুখবর হচ্ছে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং তথ্যমন্ত্রীর হৃদয়ে খোদার কিছুটা রহম হয়েছে। তারা বলছে, রোজিনার বিচারে আইনের কোনো হেরফের হবে না। এর অর্থ হচ্ছে, তাহলে আগে আইনের হেরফের হতো এখন হবে না। আইনকে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে।
তিনি আরো বলেন, আজকে আমি প্রধানমন্ত্রীর বিচার চাই না। আমি বিচারপতিদের বিচার চাই। এইযে জামিন যোগ্য মামলায় বৃহস্পতিবার কেন তারা রায় দিতে পারলেন না। বিচারপতিদের কি কোন দায়িত্ব নেই?
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সাংবাদিক বন্ধুদের বলছি, আপনারা আর কতদিন দ্বিধাবিভক্ত থাকবেন, আপনারা সব সাংবাদিক এক হতে পারছেন না কেন। সুখবর হচ্ছে, সাংবাদিক রোজিনার জন্য আপনারা পথে-ঘাটে প্রতিবাদ করছেন। সবাই মিলে সরকারের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করেন।
জেলখানার অভ্যন্তরে হেফাজত নেতার মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাওলানা ইকবালের রাজনীতি আমি বিশ্বাস করি না, কিন্তু তাকে এভাবে হত্যার অধিকার কারও নেই। জেলখানার অভ্যন্তরে কারও মৃত্যু হলে, এটা পরিষ্কার একটি হত্যাকাণ্ড। আমি এই হত্যাকাণ্ডেরও বিচার চাই।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আগামীকাল রোববার যদি সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন না হয় তাহলে আমরা কি করব। আমি বলতে চাচ্ছি সকাল ৯টার আগেই শত পুলিশের বিপরীতে পাঁচ হাজার লোক দিয়ে কোর্ট ঘেরাও করে রাখেন। জামিন হলে ভালো, না হলে সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এই মিথ্যাচার চলতে পারে না। নাগরিক সমাবেশ থেকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আহবান জানান। একইসাথে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিতা নামে মানিকগঞ্জে তৈরী করা মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে এমএন নন্দী করারও প্রস্তাব দেন।
নাগরিক সমাবেশে ড. কামাল হোসেনের দেয়া লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা হোসেন। লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। লিখিত বক্তব্য:-নাগরিক সমাবেশে ড. কামাল হোসেন এর বক্তব্য আজকের নাগরিক সমাবেশ থেকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি মামলা প্রত্যাহার, অফিসিয়াল সিক্রেট এ্যাক্টস ও ডিজিটাল আইন বাতিল, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়াসহ সকল দাবীসমূহের সাথে একাত্মতা ঘোষণা ও সমর্থন করছি । সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম পেশাগত দ্বায়িত্ব পালনের তাগিদ থেকেই সচিবালয়ে গিয়েছিলেন । স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় বড় দূর্নীতির রিপোর্ট রোজিনা জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন। এ কারনেই সরকারি আমলারা তাকে হেনস্তা করে ৫ ঘন্টা আটকে রেখে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে । সাংবাদিক রোজিনাকে রাত ৮টা পর্যন্ত কেন আটকে রেখেছিলেন এটা আমাদের প্রশ্ন? প্রথম আলো পত্রিকার সাংবাদিকসহ সমগ্র সাংবাদিক সমাজ, রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন এবং দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ যেখানে রোজিনার মুক্তি চায় সেখানে তার জামিন দিতে বাধা কোথায়? আমরা সকলে তার জামিনদার অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনার মুক্তি দাবী করছি রোজিনার মুক্তি, সকল কালা কানুন বাতিল, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানাচ্ছি।( ডা. কামাল হোসেন)
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ভ্যাকসিন ক্রয় করার নামে কত কোটি কোটি টাকা লুট করেছেন তাঁর কিছু কিছু তথ্য মিডিয়াতে প্রকাশ হয়েছে। সরকার এখন ভয় পাচ্ছে তাদের আরো দূর্নীতি যদি প্রকাশ হয়ে যায় তবে সরকারের ক্ষমতায় থাকা কষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, লকডাউন কি এখন কার্যত আছে? লকডাউন নাই। অনেকে বলতো লকডাউন মানে ক্রাকডাউন। আর আমি প্রথম দিকে লকডাউনকে বলতাম হেফাজত ডাউন। হেফাজতের একটা উইকেটতো গতকাল ডাউন হয়েছে। কোন একটা পত্রিকায় ১ম পাতায় নিউজ হয়নি। ২য় পাতায় নিউজ করেছে, ৪র্থ পাতায় নিউজ হয়েছে। কেউ ভালোভাবে পড়তেও পারেনি। একজন রাজনৈতিক নেতা, একজন ধর্মীয় নেতা জলের ভিতরে পুলিশের কাছে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে সেই খবর ঠিক মত প্রকাশিত হয়নি। তিনি বলেন, ওরা রোজিনা ইসলামের চুরির খবর বলতে চায়। ওরা নিজেরা চোর, ওরা ডাকাত। এদেশের মানুষের ভোট ডাকাতি করে ওরা ক্ষমতায় আছে। ওরা কি কোন বৈধ সরকার? ওরা কি নির্বাচিত সরকর? ওরা আবার কিসের চোরের বিচার করবে? ওরা নিজেরা চোর। বিচার করার ক্ষমতা ওদের নাই।
এসময় তিনি আরো বলেন, আপনারা যাতে বের হতে না পারেন, কথা বলতে না পারেন, মিছিল করতে না পরেন এজন্য সরকার এই লকডাউন দিয়েছেন। মান্না বলেন, রোজিনার বিষয় ওরা কিছুই বের করতে পারবে না। জাফর ভাইয়ের বিরুদ্ধে ওরা মাছ চুরির মামলা করেছিলো না? আমার বিরুদ্ধে ২টি বিরাট বড় বড় মামলা দিয়েছে। পাঁচ বছর কোন চার্জশীট নাই। লক্ষ লক্ষ কর্মী জেলখানায় আছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। এই সরকার শুধু ভয় দেখাতে চায়। যেন ভয়ে আপনারা ঘর থেকে না বের হন। এসময় তিনি বলেন, রোজিনা ইসলামের উপর এতো বড় অন্যায় হওয়ার পর আমাদের প্রতিবাদে আরো বেশী সোচ্চার হওয়ার দরকার ছিলো। মান্না বলেন, করোনায় যাদের চাকুরী গেছে এই সরকার তাদের চাকুরী দিতে পারবে? তাদের কাছে সাহায্য পাঠাতে পারবে? ২০ভাগ দরিদ্র মানুষ এখন ৪২ভাগ হয়েছে। তাদের জন্য কিছু করে না। ওরা বড় বড় শিল্পপতিদের জন্য প্রণোদনা দেয়। আর প্রণোদনা পেয়ে তারা এতোই খুশি হন যে তারা শ্রমিকের বেতন দেয় না। ওরা মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। ওরা গরীব কৃষক, শ্রমিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখে রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, ডাকসুর ভিপি নূরল হক নূর, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, গনফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, রাষ্ট্র চিন্তার সদস্য এডভোকেট হাসনাত কাইউম, কবি হাসান ফকরী প্রমুখ।
সান নিউজ/এম