তারেক সালমান : মায়ের অর্বমানে গতরাতে (মঙ্গলবার) একেবারে নির্ঘুম কাটিয়েছে কারাবন্দি প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মেয়ে আলভিনা ইসলাম। গতরাতে নির্ঘুম নয় বছর বয়সি আলভিনা বারবার কান্না করে মায়ের সঙ্গে কথা বলার বায়না ধরেছে বলে জানিয়েছেন রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু।
বুধবার (১৯ মে) দুপুরে সান নিউজের কথা হয় মিঠুর সঙ্গে। মিঠু জানান, মায়ের অনুপস্থিতির বিষয়ে মেয়েকে মিথ্যা বলে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাকে (আলভিনা) বলা হয়েছে, জরুরি কাজে মা (রোজিনা) ময়মনসিংহ গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। কিন্তু মেয়ে কিছুতেই বুঝতে চায়নি। শুধু মায়ের সঙ্গে কথা বলার বায়না ধরেছে। ওর খালা সাবিনা ইসলাম তাকে সামলাতে হিমশিম খেয়েছে। খালাকে আলভিনা বলেছে, বাবা মায়ের ব্যাপারে মিথ্যা বলে। তোমরা মাকে নিয়ে আসো। আমি মাকে ছাড়া ঘুমাবো না।
মিঠু বলেন, আজ আলভিনা ওর খালামনিকে বলেছে আমার মা ময়মনসিংহ যায়নি। তাকে (রোজিনা ইসলাম) কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।
মিঠু আরও বলেন, আমরা আশাবাদী যে রোজিনা ন্যায় বিচার পাবে। আইনমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। আশাকরি, আগামীকাল আদালত তাকে জামিন দেবে।
রোজিনা ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে কাশিমপুর কারাগারে গিয়েছেন কি না জানতে চাইলে মিঠু সাননিউজকে বলেন, না যাওয়া হয়নি। করোনার কারণে নাকি দেখা করা যাবে না, সে কারণে আমরা কেউ কাশিমপুর যাইনি। আর রোজিনাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সেজন্য নাকি তার সঙ্গে দেখা করা যাবে না বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
রোজিনা ইসলামের ছোটবোন সাবিনা ইসলাম সাননিউজকে বলেন, মায়ের অবর্তমানে গতরাতে আলভিনা খুব কান্নাকাটি করেছে। তাকে সামলাতে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনসহ আমাকে খুব পেরেশানী পোহাতে হয়েছে।
সাবিনা বলেন, আলভিনাকে বলা হয়েছে, তোমার মা অফিসের কাজে ময়মনসিংহ গিয়েছে। কিন্তু সে মানতে চায় না। রাতে না ঘুমানোয় ক্লান্ত হয়ে আজকে দিনে আলভিনা কিছুটা ঘুমাচ্ছে।
প্রসঙ্গত: গত সোমবার সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে বেলা তিনটার দিকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে একটি কক্ষে আটক করেন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে রাত নয়টার দিকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়।
সোমবার রাতেই রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। সেই মামলায় রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার রোজিনা ইসলামের রিমান্ড নাকচ করে তাকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তার জামিনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পরপরই দেশে-বিদেশে বিক্ষোভ হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠন বিবৃতি দিয়ে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও তাঁর মুক্তির দাবি জানায়।
দেশের সাংবাদিক সমাজ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ (ডিআরইউ) বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
সাননিউজ/টিএস/এম