নিজস্ব প্রতিনিধি: ৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর দেশের মুসলিমরা পবিত্র ঈদুল ফিতর করবেন আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মে)। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকার কথা তা এবারও গত বছরের ন্যায় ম্লান করে দিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস।
করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনায় এবার খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ঈদ জামাত হবে মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ বড় বড় মসজিদগুলো এরইমধ্যে ঈদ জামাতের জন্য বড় ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।
মসজিদের ইমাম ও খাদিমরা জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে, সেজন্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রধান খাদেম মো. শহিদ উল্যাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২৯ রোজা হলে বৃহস্পতিবার ঈদ হত। সে বিষয়টি মাথায় বুধবারই আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
এখন শেষবারের মত ধোয়া-মোছার কাজ চলছে। মসজিদের সাততলা থেকে শুরু করে নিচতলা পর্যন্ত জীবাণুনাশক দেওয়া হয়েছে। আজ এশার নামাজের পর আবারও আমরা ধোয়া-মোছার কাজ শেষ করব।
পাঁচটি জামাতে মুসল্লিরা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য একটি কাতার বাদ দিয়ে অন্য কাতারে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মসজিদের প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে।
অজুখানায় পর্যাপ্ত পানি ও সাবান রাখা হবে। আমরা মানুষকে আহ্বান জানাবো- তারা যেন মাস্ক পরে মসজিদে প্রবেশ করেন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন।
এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত ৮টায়, তৃতীয়টি সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত হবে সকাল ১০টায়। সর্বশেষ ঈদ জামাতটি হবে বেলা পৌনে ১১টায়।
প্রথম জামাতে ইমাম হিসেবে থাকছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিববুল্লাহিল বাকী নদভী।
তৃতীয় জামাতের ইমাম হিসেবে থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। চতুর্থ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত বেলা পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান।
বাইতুল মোকাররমের পাঁচ জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
অন্যদিকে ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টা ও সকাল ৯টায়, বায়তুল আমান মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায়, ঈদগাহ মাঠ মসজিদে ৮টায় এবং সোবহানবাগ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত হবে।
রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে সকাল ৬টা, সাড়ে ৭টা এবং সাড়ে ৯টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। পুরান ঢাকার চকবাজার শাহী মসজিদে সকাল ৮টা ও ৯টায় দুটি জামাত হওয়ার কথা রয়েছে। বড় কাটারা মাদরাসা মসজিদে ঈদ জামাত হবে সকাল ৮টায়। লালবাগ শাহী মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় একটি জামাত হবে।
মহাখালীর মসজিদে গাউসুল আজমে তিনটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং শহীদুল্লাহ হল জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত হওয়ার কথা রয়েছে।
আজিমপুর কবরস্থান মসজিদে সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা ও ১০টায় চারটি জামাত হবে। মিরপুর দারুসসালাম লালকুঠি বড় মসজিদে সকাল ৭টায় একটি জামাত হবে। পুরান ঢাকা তারা মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টা ও ৯ টায়, রায়সাহেব বাজার জামে মসজিদে সাড়ে ৮টায়, নিমতলী ছাতা মসজিদে সকাল ৮টা ও ৯টায়, আগামছি লেন জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টা ও সাড়ে ৮টায় এবং বায়তুল মামুর জামে মসজিদে সকাল সোয়া ৮টা ও ৯টায় ঈদের জামাত হওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইসলামি শরিয়তে ঈদের জামাত ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত করা যাবে। এছাড়া ঈদগাহে কোলাকুলি, করমর্দন করা থেকে বিরত থাকাসহ নামাজ আদায়ে ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুসরণ করে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মসজিদের ইমাম-খতিব, মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটি, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
এবারের ঈদ জামাত আয়োজনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। তবে দুই সিটির মেয়র নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, এবারের ঈদে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনের কোনো উদ্যোগ থাকছে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাশার মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি আওতাধীন এলাকায় খোলা মাঠে কোনো ধরনের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না।
সাননিউজ/এএসএম