রাসেল মাহমুদ: আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই খুলে দেয়া হয় মার্কেট। শর্ত ছিলো-মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। কিন্তু মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধিতো মানা হচ্ছেই না; উপরন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি এতো বেশি যে তিল ধারনের জায়গা পর্যন্ত নেই। এ অবস্থায় সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকার গত মাসের ১৪ তারিখ থেকে কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন ঘোষণা করে। এ সময়ে গণপরিবহনসহ মার্কেটগুলোও বন্ধ ছিলো। কিন্তু ১৬ মে পর্যন্ত লকডাউন বৃদ্ধি করলেও শর্তসাপেক্ষে মার্কেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসময় স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মেনে বেচাবিক্রি করতে বলা হয়। তবে সরকারের সে নির্দেশনা সীমাবদ্ধ কাগজে কলমেই।
দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে মার্কেটগুলোতে যেন জনস্রোত বইছে। তীব্র ভিড় উপেক্ষা করে কেনাকাটা করছেন সবাই। অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা দেখা গেছে মাস্ক ছাড়া।
রোববার (৯ মে) রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের অস্বাভাবিক উপস্থিতি দেখা গেছে। শপিং করতে আসার সময় অনেকেই বাসা থেকে ইফতার নিয়ে আসেন। ইফতারের সময় মার্কেটের লবিতে ইফতার করতে দেখা গেছে হাজার হাজার মানুষকে।
সোমবার (১০ মে) রাজধানীর নিউমার্কেট, নিউ সুপার, চন্দ্রীমা, চাঁদনি চক, নূর ম্যানশন, গাউছিয়া ও নুর জাহান মার্কেটের চিত্র যেন 'ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই' অবস্থা। শুধু মার্কেটই নয়, ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজেও মানুষের ভিড় ছিলো অস্বাভাবিক। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হতে দেখা গেছে অনেককে।
মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুন। সুযোগ বুঝে বিক্রেতারাও কিছুটা বেশি দাম নিচ্ছেন। অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা মাস্ক পড়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি।
বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতার চাপ সামলাতে গিয়ে শতভাগ স্বাস্থ্যববিধি মানা সম্ভন হচ্ছে না। ক্রেতারাও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘণের বিষয়টি স্বীকার করছেন।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. বাবু সাননিউজকে বলেন, ঈদের আগে শেষ মূহুর্তে ভিড় একটু বেশি। মাঝে মাঝে আমাদের নিজেদেরও ভয় লাগছে। আমরা চাই ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব মেনেই আসুক। তবে আমরা চেষ্টা করি সবাইকে সচেতন করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালাতে।
মো. সাদ্দাম হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, লকডাউন দেওয়ায় সব মার্কেট বন্ধ ছিল। তখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো কেনা হয়নি। এখন সুযোগ পেয়ে মার্কেটে আসছি।
আরেক ক্রেতা সালমান বলেন, লকডাউনের মধ্যে ঘরের বাইরে তেমন বের হইনি। যেহেতু এখন লকডাউন শিথিল করা হয়েছে, তাই একটু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে মার্কেটে এসেছি।
সামিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, যে পরিমাণ ভিড়, তাতে ইচ্ছা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব না।
এদিকে, মূল মার্কেটের ব্যবসার পাশাপাশি ফুটপাতের ব্যবসাও জমে উঠেছে। ফুটপাতগুলোতেও ক্রেতার উপস্থিতি বেশি। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা একে অন্যের গায়ের সঙ্গে ঘেঁষে কাপড়, জুতা, টি-শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বেচাকেনা করছেন। মার্কেটের ভিড়ের কারণে নিউমার্কেট এলাকায় তীব্র যানজটও দেখা গেছে।
মার্কেটের এই ভিড়ের কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে ধারনা করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, মানুষের চলাচল, বিশেষ করে ঈদ কেনাকাটার চিত্র দেখে আমি শঙ্কিত। উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, ঈদকে কেন্দ্রে করে বাড়ি ফেরা মানুষ ও মাকের্টগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। যে কারণে করোনা বিস্তারে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
সাননিউজ/আরএম/টিএস/