নিজস্ব প্রতিবেদক : জনসাধারণকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা ঈদ বাড়িতে না করলে কী হয়? নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঈদ করুন।
রোববার (০৯ মে) পূর্বাচল প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) এসেছে, যেটা আরও বেশি মারাত্মক। এতে যারা সংক্রমিত হয়, তারা আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। যে কারণে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা পার্শ্ববর্তী দেশে এ ভাইরাস আক্রমণ করেছে। আর প্রতিবেশী আক্রান্ত হলে তা থেকে দূরে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
তিনি বলেন, নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঈদ করুন। কেননা বাড়ি যাওয়ার পথে কে ভাইরাস বহন করছেন, কে করছেন না, তা আমরা কেউ জানি না। কাজেই বাড়ি যাওয়ার পথে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বলব, বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাড়ি যাওয়ার পথে আপনি ভাইরাস বহন করে নিয়ে যেতে পারেন আপনার পরিবারের কাছে। যাতে করে আপনার মা-বাবা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হতে পারে। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। নিজে সুরক্ষিত থেকে অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরতে হবে।
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন। নিজের ভালো চিন্তা করেন। সঙ্গে নিজের পরিবারের ভালো চিন্তা করেন। এই সময়ে আপনারা মাস্ক পরে থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাম পর্যায়ের কেউ যদি ফ্ল্যাট নিতে চায়, তাদের জন্য পল্লী জনপদ নামে একটা প্রকল্প নেওয়া আছে। সেখান থেকে তারা ফ্ল্যাট কিনতে পারবে এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারবে। সেইভাবে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা শহর গড়ে তুলতে চাই। বিত্তশালীরা প্লট কেনেন। ভালো ভালো দৃষ্টিনন্দন বাড়িঘর বানান। পূর্বাচল যখন হলো, তখন আমরা দেখেছি। গুলশান-বারিধারায় বিশাল বিশাল অট্টালিকাও যাদের আছে, তাদের পূর্বাচলে একটা প্লট না থাকলে ইজ্জতই থাকে না। এরকম কিছু কিছু মানুষের মানসিকতা আমি দেখেছি। যাদের এত বিশাল বিশাল বাড়ি-ঘর অট্টালিকা রয়েছে, তাদের আরও লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে যেতে হবে কবরের সাড়ে তিন হাত জায়গায়। ধনসম্পদ কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না। এই কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায় আমি জানি না।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা সত্যিকার প্রাপ্য, আপনারা কিন্তু বঞ্চিত ছিলেন। আমার সবসময় একটা প্রচেষ্টা ছিল কীভাবে আপনাদের বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেব। জমি দিয়েছিলেন, কিন্তু প্লট পাবেন না, এটা হতে পারে না। আমার কাছে একটা প্রস্তাব আসে পূর্বাচলে জাতির পিতার একটা স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি টাওয়ার। আমি কিন্তু সেটার অনুমোদন করিনি। সেই ফাইলেই লিখে ছিলাম। আগে এখনকার আধিবাসী যারা, তারা তাদের প্লট পাবে। তারপর আমি এই প্রকল্প অনুমোদন দেব। তার আগে কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেব না। কীভাবে সেই প্লট বের করবে সেটা মন্ত্রণালয় ও রাজউক খুঁজে বের করে। সেই নির্দেশনা আমি দিয়েছি।
তিনি বলেন, এই শহরটা গড়ে তোলার জন্য বহুতল ভবন ও ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। আমি বলেছি সেগুলো বাদ দিতে হবে। আগে প্লট তৈরি করতে হবে। দরকার হলে আরও জমি নিয়ে প্লট দিতে হবে। যাদেরকে কথা দেওয়া হয়েছে, সেই কথা রাখতে হবে। এর আগে কোনো প্রকল্প আমি অনুমোদন করব না পূর্বাচলে। আপনাদের হাতে প্লট তুলে দিতে পেরেছি। এটা হলো সবচেয়ে বড় কথা। আর বঞ্চিত থাকলেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার কাছে অনেকেই মেসেজ পাঠাতো। সেগুলো আমি পড়তাম। আমি চেষ্টা করতাম। বড়লোকদের দৌরাত্ম্য বেশি থাকে। সেখানে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও অনেক কষ্ট করে এই কাজটা করা হয়েছে। আপনাদের হাতে সেটা তুলে দিতে পেরেছি সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিবসহ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। যেটুকু যেভাবে পারি মানুষকে মাথাগোঁজার ঠাঁই আমরা করে দেব। প্রতিটি ঘরেই বিদ্যুতের আলো জ্বলবে। প্রতিটি মানুষই লেখাপড়া শিখবে। সেটা শুধু কিতাবি পড়া না, সেটা কারিগরি শিক্ষা হতে পারে। শুধু বিএ, এমএ পাশ করে চাকরির পেছনে ঘুরলে হবে না। নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। নিজেরা চাকরি দিতে পারে, সেইভাবে নিজেদের কাজ করতে হবে। আমরা সেইভাবে দেশের যুবসমাজকে গড়ে তুলতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, পূর্বাচল, ঝিলমিলসহ নতুন গড়ে তোলা শহরগুলোকে শুধু ঢাকা শহর কেন্দ্রিক করা হবে না। প্রতিটি বিভাগ ও জেলাতেও এ ধরনের পরিকল্পিত বাড়িঘর মানুষের জন্য করা হবে। মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়। প্রত্যেকটা গ্রামের মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন ভালোভাবে বসবাসের সুযোগ পায়, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা হাতে নিচ্ছি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।
সান নিউজ/এসএম