মাহমুদুল আলম : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি পদ নিয়ে সৃষ্ট সংকট আপাতত কেটে গেছে বলে মনে করছেন সমিতির সদস্যদের অনেকে। সদ্যপ্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল মতিন খসরুর নামে থাকা ম্যাসেজের জায়গায় বারের ওয়েবসাইটে আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ.এম. আমিন উদ্দিনের ম্যাসেজ প্রতিস্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে এমনটা মনে করছেন তারা।
ওয়েবসাইটে ঢুকে হোমপেজে দেখা যায় বারের সভাপতির ম্যাসেজের জায়গায় এ.এম. আমিন উদ্দিনের নাম ও ছবিযুক্ত ম্যাসেজ। যদিও সভাপতি পদ নিয়ে চলমান সংকটের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) সভাপতির ম্যাসেজের জায়গায় সদ্যপ্রয়াত সভাপতির নাম ও ছবিযুক্ত ম্যাসেজই ছিল।
অবশ্য সদ্যপ্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল মতিন খসরুর নামে থাকা ওই ম্যাসেজটি আদৌ তার দেয়া কিনা- এই নিয়েও আইনজীবীদের মধ্যে রয়েছে ঘোর সন্দেহ। সন্দেহের কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আবদুল মতিন খসরুর নেতৃত্বে নবনির্বাচিত কমিটি বারের দায়িত্ব গ্রহণ করে গত ১২ এপ্রিল। যদিও ওই সময় হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি এবং সে কারণে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিতও হতে পারেননি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরেরদিন ১৩ এপ্রিল লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় তাকে। এরপর দিন ১৪ এপ্রিল হাসপাতালেই তিনি মারা যান।
আইনজীবীরা বলছেন, আবদুল মতিন খসরু জীবনের শেষ এই ২ দিন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি পদে থাকলেও সভাপতির চেয়ারে বসা হয়নি তার। পুরো ওই সময়টি তিনি হাসপাতালে ছিলেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এই অবস্থায় তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের ওয়েবসাইটের জন্য ম্যাসেজ লেখা- একটি অবাস্থব বিষয়। তাছাড়া তার মৃত্যুর অনেকদিন পর পর্যন্তও ওয়েবসাইটে তার নামে কোনও ম্যাসেজ ছিল না।
তার নামে ম্যাসেজ দেয়ার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে আইনজীবীদের অনেকে বলছেন, আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া সভাপতির আসনটি পূর্ণ করার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ.এম. আমিন উদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছিল। যিনি বর্তমানে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন এবং এই দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বার সভাপতির দায়িত্বও ইতপূর্বে পালন করেছেন তিনি। বার নির্বাচনের পর আবদুল মতিন খসরুর নেতৃত্বাধীন কমিটি গত ১২ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করার পূর্ব পর্যন্ত এ.এম. আমিন উদ্দিনই ছিলেন বারের সভাপতি। যে কারণে আবদুল মতিন খসরুর নেতৃত্বে নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করার পরও বারের ওয়েবসাইটে এ.এম. আমিন উদ্দিনের ম্যাসেজটিই দেখা যাচ্ছিল। কারণ নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সাধারণত অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে নজর দেন। গুরুত্বের পর্যায়ক্রমে ওয়েবসাইটের ম্যাসেজের মতো বিষয়গুলোতে নজর একটু সময় নিয়ে দেরিতেই দেয়া হয় সাধারণত।
জানা গেছে, শূন্য পদ পূরণে এ.এম. আমিন উদ্দিন সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ায় ওয়েবসাইটে সভাপতির ম্যাসেজ থেকে তার নাম ও ছবি সরিয়ে দিয়েছেন বারের কার্যনির্বাহী কমিটিতে যারা বিএনপিপন্থী প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তাদের কেউ কেউ। তবে সেখানে প্রয়াত সভাপতির নামে ম্যাসেজ দেয়া নিয়ে সমালোচনাও ছিল।
সভাপতির শূন্য পদ পূর্ণ করতে ডাকা বিশেষ সাধারণ সভায় একটা সংকট দেখা দিতে পারে, তা আগে থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিল। আর ওয়েবসাইটে সভাপতির জায়গায় আগে থেকেই এ.এম. আমিন উদ্দিনের নাম থাকলে ওই পদে তার নাম পুনর্বহাল করা কার্যনির্বাহী কমিটির আওয়ামীপন্থী নেতাদের জন্য সহজ হয়। আর নামটি আগে থেকেই ওয়েবসাইটে না থাকলে তা পুনর্বহাল করার ক্ষেত্রে বিএনপিপন্থী নেতাদের আপত্তি করার সুযোগ বাড়বে বিধায় তারা নামটি সরিয়ে প্রয়াত সভাপতির নাম বসিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন সাধারণ আইনজীবীদের অনেকে।
ওয়েবসাইটকে এতটা গুরুত্ব দেয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিদ্যমান মহামারি করোনার মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক আইনজীবীই সশরীরে বারে উপস্থিত হন। ভার্চুয়াল আদালত চলার কারণে অনলাইনে তারা অভ্যস্তও হয়ে উঠছেন। সবমিলে বারের ওয়েবসাইট ব্যবহারেও তারা এখন বেশ অভ্যস্ত। আর বারের ওয়েবসাইটে ঢোকামাত্রই হোমপেজে সভাপতির স্থানে যার ছবি ও নাম দেখা যাবে, কোন সংকট থাকলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা তাকেই সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে পারেন। কিন্তু সহজ এই পথটির সুবিধা যেন কমিটির আওয়ামীপন্থী নেতারা নিতে না পারেন, সেজন্যেই এ.এম. আমিন উদ্দিনের নামটি সরানোর তাগিদ থেকেই বিএনপিপন্থী নেতারা প্রয়াত সভাপতির নামে ম্যাসেজ দিয়েছেন বলে মনে করছেন সাধারণ আইনজীবীদের অনেকে।
তবে বর্তমানে সভাপতির ম্যাসেজের জায়গায় এ.এম. আমিন উদ্দিনের নাম থাকায় সংকট কেটে গেছে বলে মনে করছেন তারা।
প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার (৪ মে) সভাপতির শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে আহ্বান করা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সদ্য সাবেক সভাপতি এ.এম. আমিন উদ্দিনকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন। আর বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হওয়া সম্পাদক ওই দিনের বিশেষ সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি ঘোষণা করেন বলে জানান।
পরদিন বুধবার (৫ মে) এ নিয়ে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে। আওয়ামীপন্থী আইনজীবী নেতাদের করা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা ৭ সদস্য। আর বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতাদের করা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিটিতে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা ৬ সদস্য।
আইনজীবীদের অনেকে মনে করছেন, পাল্টাপাল্টি ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বার সভাপতির পদ নিয়ে যে সংকট স্পষ্ট হয়েছিল, ওয়েবসাইটে বার সভাপতি হিসেবে এ.এম. আমিন উদ্দিনের ম্যাসেজ প্রকাশিত হওয়ায় সেই সংকটের সমাধান হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে বারের সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল সাননিউজকে বলেন, এ.এম. আমিন উদ্দিন সাহেব আগের কমিটিতে সভাপতি ছিলেন। ম্যাসেজটি হয়তো সে সময়ের। কারণ সভাপতির পদ পূরণের জন্য ডাকা বিশেষ সাধারণ সভাতো আমরা মুলতবি করেছি।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবারও (৬মে) ওয়েবসাইটে সদ্যপ্রয়াত সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর ম্যাসেজ ছিল, সাননিউজের কাছে সেই স্ক্রিনশট আছে- এই বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করা হলে সম্পাদক বলেন, আসলে আমি ওয়েবসাইটের বিষয় ভালো জানি না। তবে আবদুল মতিন খসরু সাহেব দায়িত্ব গ্রহণের পর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হাসপাতালে যে অবস্থায় ছিলেন, ওই অবস্থায় তার দ্বারা ম্যাসেজ লিখে দেয়ার মতো বাস্তবতা ছিল না।
সান নিউজ/এসএম