নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান করোনা মহামারির মধ্যে দুই দফা লকডাউনে চলা ভার্চুয়াল আদালতে আজ অবধি লক্ষাধিক আসামি জামিন পেয়েছেন। বর্তমান লকডাউনে এবং প্রথম দফায় গতবছরের লকডাউনে চলা ভার্চুয়াল আদালতে এই জামিন পান হাজতি অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মুহাম্মদ সাইফুর রহমান বুধবার (৫ মে) এ তথ্য জানান।
সুপ্রিম কোর্টের এই বিশেষ কর্মকর্তা জানান, গতকাল মঙ্গলবার (০৪ মে) সারাদেশে অধস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে তিন হাজার ৮৮ টি ফৌজদারি মামলায় ভার্চুয়াল শুনানিতে জামিন আবেদনের নিষ্পত্তি হয়। এতে এক হাজার পাঁচশত ৩৬ জন হাজতি অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পেয়ে কারাগার হতে মুক্ত হয়েছেন। গত ১২ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ভার্চুয়াল আদালত শুরু হওয়ার পর ৪ মে পর্যন্ত মোট ১৬ কার্যদিবসে সারাদেশে অধঃস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে একান্ন হাজার ৮৮২টি মামলায় জামিন আবেদন ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।
নিষ্পত্তি হওয়া এই অর্ধলক্ষাধিক মামলায় মোট ২৭ হাজার ৮৪৪ জন হাজতি অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। জামিন প্রাপ্তদের মধ্যে ৩৬৭ শিশু রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কর্মকর্তা জানান, ইতোপূর্বে ভার্চুয়াল আদালত শুরু হওয়ার পর প্রথম দফায় গতবছর ১১ মে থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৫৮ কার্যদিবসে সারা দেশে অধস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে ভার্চুয়াল শুনানিতে মোট এক লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৯ টি ফৌজদারি মামলায় জামিন-দরখাস্ত নিষ্পত্তি এবং ৭২ হাজার ২২৯ অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর হয়েছে (শিশু আদালতসহ)।
এ পর্যন্ত দুই দফায় ৭৪ কার্যদিবসে সারাদেশে অধঃস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে এক লাখ ৯৯ হাজার ২২১টি ফৌজদারি মামলায় জামিনের আবেদন ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। যাতে মোট এক লাখ ৭৩ হাজতি অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পেয়ে কারাগার হতে মুক্ত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৮ জুলাই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার বিল-২০২০’ জাতীয় সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অবশ্য মহামারিকালে প্রয়োজনের তাগিদে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালত যাত্রা শুরু করে। ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে গত মার্চে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে আদালতও বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ছুটির মধ্যে বিচারকাজ থেমে যাওয়ায় ভার্চুয়াল আদালতের ভাবনা গতি পায় যেখানে আইনজীবী, বিচারক, আসামি, বাদী কিংবা আদালত কর্মী কেউই একসঙ্গে না বসেই শুনানি নিতে পারেন।
ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রেখে ২০২০ সালের ৭ মে মন্ত্রিসভা এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়ার পর অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালতের কাজ শুরু হয়ে যায়। কোনও অধ্যাদেশ জারির পর তা আইনে পরিণত করতে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে অনুমোদন নিতে হয়। না হলে অধ্যাদেশটির কার্যকারিতা হারায়।
সে অনুযায়ী অধ্যাদেশটি আইন হিসেবে জারি করতে গত বছর ২৩ জুন সংসদে বিল তোলা হয়। তখন বিলটি পরীক্ষা করে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ২৪ জুন সংসদীয় কমিটি বিলটি নিয়ে বৈঠক করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
২৯ জুন সংসদীয় কমিটি বিলটি পরীক্ষা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সংসদে দেয়।
সংসদে তোলা বিলের ৫ ধারায় বলা ছিল—‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগ সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।’
সংসদীয় কমিটি এই ধারাটির পরিবর্তন আনার জন্য সুপারিশ করে। ‘সময় সময়’ শব্দ দুটির আগে ‘প্রয়োজন অনুসারে’ শব্দ দুটি যোগ করার কথা বলে।
সান নিউজ/আরএস