সাননিউজ ডেস্ক: নামের একাংশ মিল থাকায় প্রকৃত আসামি হাসিনার পরিবর্তে দেড় বছর ধরে সাজা ভোগ করছেন নিরাপরাধ এক হাছিনা।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার একটি মাদক মামলায় ৬ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছিল টেকনাফের হাসিনা আক্তারের। নামের একাংশের সাথে মিল থাকায় তার জায়গায় প্রায় দেড় বছর ধরে সেই সাজা খাটছেন হাছিনা বেগম। আদালতের নির্দেশে পুলিশের অনুসন্ধান প্রতিবেদনেও এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।
বিষয়টি রোববার (২ মে) চট্টগ্রাম ৪র্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁইয়ার আদালতের নজরে আনেন তরুণ আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।
এই অসংগতি ধরা পড়লে আদালত আগামীকাল ৪ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা রেজিস্টারে মূল আসামির সাথে সাজা ভোগকারীর ছবি মিল-অমিল তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন কারা কর্তৃপক্ষকে।
আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ জানান, কারাগারে থাকা হাছিনা বেগমের অপরাধীর তালিকায় নাম নেই। অতীতে অপরাধের সাথেও কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তবুও তিনি জেল খাটছেন। অপরাধ একটাই, সাজাপ্রাপ্ত আসামির নামের প্রথম অংশ ও স্বামীর নামের একাংশের সাথে মিল রয়েছে।
তবে অপরাধীর নামের সাথে মিল থাকলেও বাবা-মায়ের নামের সাথে অমিল রয়েছে। কারাগারে থাকা হাছিনা বেগমের বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার হোসন বর বাড়ি। তিনি হামিদ হোছনের স্ত্রী।
আর সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাসিনা আক্তার একই এলাকার ইসমাইল হাজি বাড়ির হামিদ হোসেনের স্ত্রী।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা ও পরবর্তীতে দায়রা মামলা দায়ের হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাসিনা আক্তার ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে কারাগারে যান। একই বছর ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে জামিনে বেরিয়ে পলাতক হন।
২০১৯ সালের ১ জুলাই পলাতক থাকা আসামিদের অনুপস্থিতিতে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর ৫ম আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী এক রায়ে হাসিনা আক্তারকে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
পরবর্তীতে টেকনাফ থানা পুলিশ ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর টেকনাফের চৌধুরী পাড়ার হোসেন বর বাড়ি থেকে নামের সাথে সাজাপ্রাপ্ত আসামির নামের একাংশের মিল থাকায় হাছিনা বেগমকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে কারাগারে হাসিনা আক্তারের সাজা ভোগ করছেন নিরীহ হাছিনা বেগম।
বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে আদালত টেকনাফ থানাকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের চাহিত সেই অনুসন্ধান প্রতিবেদন রবিবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
আদালতে হাছিনা বেগমের প্রতিবেদন দেয়া টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো: খোরশেদ আলম জানান, বর্তমানে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে থাকা হাছিনা বেগম পূর্বে গ্রেফতার হওয়া হাসিনা আক্তার এক নয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান কারাগারে থাকা হাছিনা বেগমের স্বামী পালাতক থাকায় পূর্ণাঙ্গভাবে তদন্ত করা যায়নি।
এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০১৭ থেকে প্রায় ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। সাজা হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে হাছিনা বেগম কারাগারে আসেন। কারা রেজিস্ট্রারে থাকা দুজনের ছবির মিল নেই। মূল আসামি হাসিনা আক্তারের ছোট একটা ছেলে ও একটা মেয়ে ছিল কারাগারে থাকার সময়।
হাছিনা বেগমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ জানান, হাছিনা বেগম মামলার প্রকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামি নয় বলে টেকনাফ থানার প্রতিবেদন দিয়েছে। হাছিনা বেগমকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দেয়ার আবেদন করা হয়েছে।
আদালত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়েছেন এবং আগামী ৪ মের মধ্যে কারা রেজিস্টার পরীক্ষা করে হাছিনা বেগমের বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সাননিউজ/এএসএম