সারাদেশে শিশু ধর্ষণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর দেশব্যাপী শিশু ধর্ষণ,হত্যা ও নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় দেশবাসী ও অভিভাবক মহল আজ রীতিমতো উদ্বিগ্ন । স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা,বিশ্ববিদ্যালয়,বাসে-লঞ্চে,পথে-ঘাটে কোথাও যেন শিশুরা নিরাপদ নয়। আর বার বার এই ঘটনা গুলো বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষণ্ণ করছে।
শিশু পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সংবাদ সম্মেলন বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২০১৯ সালে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে তিনগুণ। এমনই তথ্য উঠে এসেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) একটি প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯০২ জন শিশু। এছাড়া হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ২৮০ জন শিশুকে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ২৬৬ জন শিশু। ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হয় ৩৫৬ জন শিশু এবং নিহত হয় ২২৭ জন।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে, সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনটির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রাফিজা শাহীন। সংগঠনটি নিয়মিত আটটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই তথ্য সংগ্রহ করে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু অর্থাৎ ৯৮৬ শিশু নিহত হয়েছে বিভিন্ন দুর্ঘটনায়। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫৫৩ এবং পানিতে ডুবে মারা গেছে ২৫২ শিশু। এছাড়া ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, হত্যা, অপহরণ, নিখোঁজ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে আরও ৩৬১ জন শিশু।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ শতকরা ৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সের শিশু রয়েছে ৩৯ শতাংশ। সর্বোচ্চ সংখ্যক ধর্ষণের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা জেলায়। দ্বিতীয় অবস্থানে নারায়ণগঞ্জ এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা জেলা।
রাফিজা শাহীন বলেন, ২০১৯ সালে আত্মহত্যা করেছে ৬৫ জন শিশু এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছে ৯ জন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৫২ জন। এছাড়া ২০১৯ সালে অপহরণের শিকার হয়েছে ৮৩টি শিশু। এর মধ্যে মারা গেছে ১২ জন এবং আহত হয়েছে ৭১ জন। নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৫৯ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে ১২ জন এবং আহত হয়েছে ১৪৭ জন। কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫ জন শিশু। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় তিনজন শিশু নির্যাতিত হয় এবং তাদের মধ্যে দু’জন মারা যায়। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে নির্যাতিতের সংখ্যা বেড়েছে।
এসব ঘটনার কারণ হিসেবে সংগঠনটি জানিয়েছে, পরীক্ষায় ফেল, পরিবারের ওপর রাগ, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার শিকার, বাল্যবিবাহ, হতাশা, পড়াশোনা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশের হুমকিতে ব্ল্যাকমেইল উল্লেখযোগ্য।