নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের টিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এটি গণহারে প্রয়োগ কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও অণুজীববিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ মনজুরুল করিম।
রোববার (২ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন ড. মুহম্মদ মনজুরুল করিম।
তিনি বলেন, টিকার সেফটি কতটুকু বিবেচনায় আনা হয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। টিকা নেওয়ার পর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অনেকে মারা যাচ্ছেন বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নানা তথ্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
ড. মুহম্মদ মনজুরুল আরও বলেন, আসলে অক্সফোর্ড টিকায় অ্যাডিনোভাইরাল ভেক্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি একেবারেই নতুন প্রযুক্তি এবং এর সেফটি এখনও পরীক্ষিত নয়। এত দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি পজিটিভ সেন্সের আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের সেফটি ভালো হবে, সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এক্ষেত্রে টিকার সেফটি আমাদের জনগণের ইমিউনিটি সাপেক্ষে অবশ্যই পরীক্ষা করা উচিত। সেফটি পরিমাপ না করে জনগণের ওপর তা গণহারে প্রয়োগ কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এই অণুজীববিজ্ঞানী বলেন, গত বছর করোনাভাইরাস আসার পর আমাদের দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের নন কোভিড রোগীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। ২০২০ সালে দেশে মোট মৃত্যু ছিল ৮ লাখের বেশি। কিন্তু করোনায় মৃত্যু ঘটে মাত্র ৮ হাজার লোকের, যা মোট মৃত্যুর এক শতাংশ। এ ১ শতাংশ মৃত্যু কমাতে গিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ করে বাকি ৯৯ শতাংশ মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে। বিশেষ করে লকডাউন দেওয়ার ফলে এই ৯৯ শতাংশ রোগীর জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার বিভিন্ন মেয়াদী প্রভাবে অনেক লোক ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আরও মারা যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এছাড়া লকডাউনের কারণে মানুষের আর্থিক অসঙ্গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে জরুরি ওষুধপত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশন ও চিকিৎসাসেবা নেওয়ার সামর্থ্য কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মৃত্যুহার মারাত্মকভাবে বাড়বে।
তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ সায়েন্স জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস বায়ুবাহী। এর আগেও পৃথিবীর ৩২টি দেশের ২৩৯ জন বিজ্ঞানী প্রমাণ করেছেন, করোনা বাতাসে ছড়ায়। করোনাভাইরাস যদি বাতাসে ছড়ায়, তবে করোনা দমন করতে লকডাউনের কোনো ভূমিকা নেই। কারণ, লকডাউন দিয়ে মানুষ আটকে রাখা যায়। কিন্তু বাতাস আটকে রাখা যায় না। অনেকে বিভিন্ন গ্রাফ ও গবেষণা প্রকাশ করে দাবি করেন, করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউনের ভূমিকা আছে। তাদের এই গবেষণাগুলো মূলত আন-কন্ট্রোলড বিফোর আফটার স্টাডি, যেখানে এক্সপেরিমেন্টাল গ্রুপকে কোনো কন্ট্রোল গ্রুপের সঙ্গে তুলনা করা হয় না। ফলে প্লাসিবো ইনফেক্ট ও অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলোকে বিবেচনায় আসে না। এতে তাদের স্টাডিগুলোতে অনেক ভুল ফলাফল প্রদর্শিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মূলত প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ফ্লু ভাইরাসে স্বাভাবিকভাবে ১০০ কোটি লোক আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ২০ কোটি লোকের মধ্যে ইনফেকশন ভাইরাল নিউমোনিয়া পর্যায় চলে যায়। ভাইরাল ফ্লুগুলোর একটি বড় অংশের জন্য দায়ী করোনাভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইনগুলো। এ সমস্যার নতুন কিংবা সাময়িক কোনো বিষয় নয়। তাই তাড়াহুড়ো করে লকডাউন দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেও কোনো লাভ হবে না, বরং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দিকে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগকে দৃষ্টি দিতে হবে।
সাননিউজ/এমআর/