নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন করা যাবে। এমন অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। বর্জ্যকে মূল্যবান পণ্যে রূপান্তর করতে এই অভিনব যন্ত্রটির উদ্ভাবন তাদের।
উদ্ভাবনকারী তরুণ দুই শিক্ষার্থী হলেন এইচএম রঞ্জু ও পীযুষ দত্ত। উদ্ভাবিত তাদের যন্ত্রটি গত ২৭ মার্চ থেকে তেল ও গ্যাস উৎপাদন শুরু করেছে। শহরের ময়লাগুলো শুধু ডাম্পিং করে পরিবেশ নষ্ট না করে এই বর্জ্যকে কাজে লাগাতেই এমন উদ্যোগ নেন তারা।
তাদের এই যন্ত্রের মাধ্যমে বর্জ্য থেকে উৎপাদিত হচ্ছে জ্বালানি তেল, জৈব সার, বায়ো ফুয়েল, এক্টিভেট কার্বন, পেট্রোলিয়াম গ্যাস। এতে তাদের লাভ হচ্ছে খরচের প্রায় ২৫ শতাংশ।
কিভাবে শহরের বর্জ্য নিয়ে কাজ করার চিন্তা তাদের আসলো সে বিষয়ে জানিয়ে রঞ্জু বলেন, তখন আমরা ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী, গত ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আমরা (পীযুষ দত্ত এবং এইচ এম রঞ্জু) আমরা আমাদের ক্যাম্পাস (কার্জন হল) থেকে যে যার হলে এবং বাসায় যাচ্ছিলাম। ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়েই আমি আর পীযুষ আমরা দুজন একসাথে জগন্নাথ হলের দিকে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ বিভিন্ন আলাপচারিতার মাঝে ঢাকা শহরের বর্জ্য এবং এগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলছিলাম।
আমাদের শহরের বর্জ্যগুলো শুধু ডাম্পিং করা হয়ে থাকে, আর এজন্য আমিন বাজার কিংবা মির্দাবাড়ি এলাকায় প্রচুর দুর্গন্ধ এবং লোকজন অতিষ্ঠ। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু আমরা ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী, আমরা একটা চেষ্টা করে দেখতেই পারি। এভাবেই শুরু হলো আমাদের এই পথচলা। বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার হয়ে আমরা একসময় সফলতার মুখ দেখি। আমরা আমাদের প্রচুর পরিশ্রম আর চেষ্টার মাধ্যমে এক নতুন এবং আধুনিক মানের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো বর্জ্যকে সম্পর্করূপে প্রসেসিং করে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে মূল্যবান পণ্যে রূপান্তর করা। কেমিক্যাল আর থারমাল প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে আমরা বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল, জৈব সার, বায়ো ফুয়েল, এক্টিভেট কার্বন, পেট্রোলিয়াম গ্যাস উৎপাদন করতে সক্ষম হই।
রাজধানীর মাতুয়াইলে তুষারধারা এলাকায় প্রায় সাত কাঠা জমির উপর বানানো তাদের প্ল্যান্টটি। গ্যাস ও জ্বালানি তেল ছাড়াও এতে আরও সাত প্রকারের দ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানান তারা। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উপকরণ যুক্ত করে যন্ত্রটির মাধ্যমে বিদ্যুৎও উৎপাদন করা যাবে। এতে প্রতি ইউনিটের খরচ পড়বে সাড়ে ৫ টাকা থেকে পৌনে ৬ টাকা।
আর্থিক সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান এবিসি কনস্ট্রাকশন কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের সহায়তায় তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের প্ল্যান্টে তৈরি হওয়া প্রতিটি পণ্য মূল্যবান এবং সরকার এগুলো বিদেশ আমদানি করে থাকে। তাই তাদের এই যন্ত্রটির মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে বলেও আশাবাদী উদ্ভাবকরা।
তাদের এ কাজে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তসলিম-উর-রশিদ, সহকারী অধ্যাপক সাজিদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ এডভান্স রবোটিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিমি মজুমদার।
সান নিউজ/এসএম