নিজস্ব প্রতিবেদক : চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় ক্ষতিপূরণ পাবে সরকারি কর্মকর্তাসহ ব্যাংক কর্মকর্তারাও। ডাক্তার, নার্স, পুলিশসহ সকল ফ্রন্টলাইনারই মৃত্যু হলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু চলমান লকডাউনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকিভাতাও পাচ্ছেন না।
এমনকি আসন্ন ঈদুল-উল-ফিতরের পূর্বে এপ্রিল মাসের বেতন ও বোনাস পাবেন কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তায় রয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা।
তারা বলছেন, প্রতিবছর ঈদে অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না দিয়ে গড়িমসি করেন। এতে আনন্দহীন হয়ে যায় তাদের ঈদ। তাই এ বছর মে'র প্রথম সপ্তাহে বেতন-বোনাস চান তারা।
জানা গেছে, প্রতি বছর ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে ঝুঁকিতে থাকে পোশাক কারখানাগুলো। এবছরও ২ শতাধিক পোশাক কারখানা তেমন ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্তত ১৬০টি কারখানা এখন পর্যন্ত মার্চের বেতনই পরিশোধ করতে পারেনি বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় কয়টি কারখানা একই সাথে এপ্রিলের বেতন ও বোনায় দেবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
তবে আগামী ১০মের মধ্যে পোশাকসহ সব খাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এ আহ্বা জানান তিনি। বলেন, শ্রমিকদের আগের কোনো মাসের বেতন যদি বকেয়া থাকে, সেসব বেতনও পরিশোধ করতে হবে।
কিন্তু ১০মের মধ্যে বেতন-বোনাস প্রদানের সরকারি ঘোষণার প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না পোশাকশ্রমিকরা।
তারা বলেন, ঈদের আগে মূলত চলতি মাসের ৫ তারিখ ব্যাংক চালু থাকবে। এ মাসের ৭ ও ৮ মে শুক্র-শনিবার এবং ১০ মে শবে কদরের জন্য ব্যাংক বন্ধ। যা মালিকদের অজুহাত তৈরির সুযোগ করে দেবে।
এই অজুহাতে সুযোগ সন্ধানী মালিকরা ঈদের নিকটবর্তী সময়ে শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে উৎসব করার আকাঙ্ক্ষার সুযোগ নিয়ে বরাবরের মতো তাদের ন্যায্য প্রাপ্য বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত করবে। পোশাকশিল্প মালিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকার শ্রমিকদের পুনরায় বঞ্চিত করার পথ উম্মুক্ত রাখল।
এদিকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পোশাকশ্রমিকদের এক মাসের সমপরিমাণ (পূর্ণ) ঈদ বোনাসসহ এপ্রিল মাসের বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ) নামের একটি সংগঠন। একইসঙ্গে তারা শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ মে'র মধ্যে বেতন-বোনাস প্রদানে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আহ্বানের নিন্দা জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার সংগঠনটির যুগ্ম-সমন্বয়ক আব্দুল ওয়াহেদ এবং কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই দাবি ও নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে পরিষদের নেতারা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউন ঘোষণা করে সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হলেও পোশাকশ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে কাজ করায় সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকিভাতা প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়নি।
জি-স্কপসহ অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠন ২০ রমজান অর্থাৎ ৩ মে-এর মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের আহ্বান জনালেও তাদের দাবি উপেক্ষা করে শ্রম মন্ত্রণালয় মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে ১০ মে-এর মধ্যে বেতন-ভাতা প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ১০ মে নয় মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই শ্রমিকদের এক মাসের মূল মজুরির সমান ঈদ বোনাসসহ এপ্রিল মাসের মজুরি পরিশোধ করতে হবে। আর সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ না করার কারণে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তার দায় পোশাকশিল্প মালিকদের নিতে হবে।
এদিকে, মালিকরা পোশাকশ্রমিকদের বেতন-বোনাস সময়মতো যেন পরিশোধ করে তার জন্য পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কাজ করছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, সংগঠন দুটি সংশ্লিষ্ট মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমরা এটা নিয়ে খুব চিন্তিত। করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ব্যবসায়ীরা অনেকেই এখন খাদের কিনারায়। বিষয়টি বিবেচনা করেই আমরা সরকারের কাছে শ্রমিকের বেতন দেওয়ার জন্য প্রণোদনা চেয়ে আবেদন করেছি। সরকার যদি আমাদের প্রণোদনার টাকাটা দিত তাহলে বেতন নিয়ে চিন্তা করতে হতো না। তখন বোনাসটাও সময়মতো দিতে পারতাম।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সহায়তা ছাড়া বেতন-বোনাস একত্রে পরিশোধ করা অনেক কারখানার পক্ষেই অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকার, কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
সাননিউজ/আরএম/এম