রাসেল মাহমুদ : করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন আগামী ৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও শপিংমলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্রেতার অভাবে বিরস সময় কাটছে ব্যবসায়ীদের।
জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার পর গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়া হয়। করোনার ভয়াবহতা ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গত চারদিনেও ক্রেতার উপস্থিতি সন্তোষ জনক হয়নি। এতে ব্যবসায়ীদের দিন কাটছে চরম হতাশায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে চললে আর্থিকভাবে তারা চরম ক্ষতির মুখোমুখি হবেন।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর কয়েকটি শপিংমল ঘিরে ব্যবসায়ীদের কথার সত্যতা মেলে। অধিকাংশ মার্কেটই ছিলো ক্রেতা শূন্য। বেশির ভাগ দোকানে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের বসে থাকতে দেখা গেছে।
শনির আখড়া এলাকার প্রসিদ্ধ শপিং সেন্টার আয়েশা সুপার মার্কেট ও আর এস শপিং কমপ্লেক্সে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতার উপস্থিতি ছিলো হাতে গোনার মতো। নিউ মার্কেট ও তার পার্শ্ববর্তী মার্কেটগুলোতে দর্শনার্থী থাকলেও তেমন ক্রেতা ছিলো না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স নানা অফার ঘোষণা করলেও ক্রেতার উপস্থিতি খুব বেশি ছিলো না। রাজধানীর অন্যান্য মার্কেটেও একই অবস্থা বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ক্রেতারা ইচ্ছা থাকলেও আসতে পারছেন না। তাই মার্কেটের আশপাশে যাদের বাসা, তারাই আসছেন। এখন দেখে যাচ্ছেন পরে হয়তো কিনবেন। বাস চলাচল শুরু হলে রোজার শেষ দিকে বিক্রি কিছুটা বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
বিভিন্ন ব্যবসায়ীরর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তবে এবার বিক্রি সন্তোষজনক হবে বলে মনে করছেন না। কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। তাছাড়া ইতিমধ্যে ১৫ রোজা চলে গেছে। সাধারণত রোজার ঈদের বিক্রি ১০ রোজার আগেই শুরু হয়ে যায়। গত বছরের মতো এই বছরও তাদের লোকসান গুনতে হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, লকডাউনের মধ্যে ক্রেতা না থাকায় দোকান খোলা আর না খোলা সমান। সারা বছর যে পরিমান ক্রেতা থাকে এখন তার থেকে বেশি নয়। লকডাউনের মধ্যে দোকান খোলায় ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ আরও বাড়ছে বলে জানান তারা।
তারা মনে করেন, এখন বিক্রি হোক আর নাই হোক, দোকন ভাড়া-কর্মচারীদের বেতন, ঈদ বোনাস সব মিলিয়ে চাপ বেড়েছে।
এক বিপনি বিতানের কর্মকর্তা মো. আকাশ বলেন, সকাল থেকে দু-চারজন ক্রেতা এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু দরাদরি করে চলে যাচ্ছেন। দু'একটা বিক্রি হচ্ছে। ঈদের এই পূর্ব মুহুর্তে ক্রেতাদের যেমন সমাগম থাকার কথা ছিলো, তার কিছুই নেই।
গতবছর দোকানতো একেবারে বন্ধ ছিল। আমরা মনে করেছিলান গতবারের সেই ক্ষতি কিছুটা পুরনো করতে পারবো। কিন্তু তা আর হচ্ছে না।
শফিকুল ইসলাম নামের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, মার্কেট খোলার অনুমতি দিলেও কাস্টমার এবং বিক্রির মাধ্যমে সন্তুষ্ট নই। কারণ ঈদের বাজার হিসেবে যেমন চাপ থাকার কথা ছিলো, তার কিছুই নেই। স্বাভাবিক সময় যেমন বিক্রি হয় এখন তেমনই হচ্ছে। প্রতিবছরের এই সময়ে মার্কেটে যেমন চাপ থাকে এবং আমাদের বিক্রির যে একটা চাপ থাকে তার কিছুই নেই।
এক ব্যবসায়ী মো. আকাশ ও তার কর্মচারী দোকান খুলে বসে আছেন। এসময় দোকানের মধ্যে কোন ক্রেতা লক্ষ্য করা যায়নি। লকডাউনে ঈদের পুর্বে ব্যবসার চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই কি আর বলবো। আপনি তো নিজেই দেখতেছেন দোকান খুলে আমি এবং আমার কর্মচারী বসে আছি। কোন ক্রেতা নেই।
ব্যবসায়ী মো. আরাফাত বলেন, গতবছর লকডাউনের পর থেকেই ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। গতবছর লকডাউনের পর দোকানের কর্মচারীকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। কষ্ট হলেও নিজে একাই চালিয়ে নিচ্ছি। এখন অবস্থা খুবই ভয়াবহ। প্রতি মাসে মূলধন ভাঙছেন বলে জানান তিনি।
আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, দোকান ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে যাবো। বাড়ি গিয়ে জমি চাষ করবো।
সাননিউজ/আরএম/এএসএম