নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার সংক্রমণ রোধে চলছে লকডাউন। তৃতীয় দফায় আরও সাত দিন বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত লকডাউনের নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে, স্বাস্থ্য বিষেজ্ঞরা মনে করছেন, লকডাউনের সময় বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এর উদ্দেশ্য সফল হবে না।
বিষেজ্ঞরা বলছেন, শুধু লকডাউন নয়, মাস্ক পড়াকে বাধ্য করতেই হবে। পাড়ামহল্লা, অলি-গলিতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ মূল সড়কে না এলেও পাড়া-মহল্লায় ঠিকই জটলা পাকাচ্ছে। তাতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। তাই সেদিকে জোর দেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) সরজমিনে বাজার ও খাবারের দোকান গুলো ঘুড়ে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্বের অনুপস্থিতি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার প্রবণতা। অথচ গত বছর এসময় বাজারের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক ও তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা ছিল। এবার এর লেশমাত্র নেই। সব মিলিয়ে কাঁচাবাজারগুলোতে করোনাবিধির বালাই ছিল না। তবে কিছু কিছু শপিং মল গুলোর প্রবেশ মুখে জীবাণুনাশক ও তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা দেখাগেছে।
এ নিয়ে করোনার জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামের বক্তব্য মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক করতেই হবে। দূরত্ব মানতে হবে। একটি দোকানের সামনে ১০ ফুট জায়গা ফাকা রাখতে হবে। সেখানে দুই জন ক্রেতা দূরত্ব বজায়ে দাঁড়াবেন। দুই জনের কাজ শেষ হয়ে গেলে আরও দুই জন আসবে। এছাড়া মাস্ক পড়াকে বাধ্য করতেই হবে। এভাবে মানাতে পারলে ৯৬ ভাগ প্রটেকশন হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামিয়ে দিক। আর্মি গাড়িতে করে টহল দিচ্ছে দেখলে দেখবেন সবাই মাস্ক পরবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন,রাস্তাগুলোতে ফাঁকে ফাঁকে বাজার বসবে, একটা দোকান থেকে আরেকটা দোকান ২০ মিটার দূরত্বে বসাবে, জনগণের মধ্যে দূরত্ব বাজায় রাখতে দাগ দিয়ে রাখবে। এগুলো অনেক প্রস্তুতির বিষয় আছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণের উদাসীনতা ঠেকাতে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই মেয়র, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।অন্নথায় লকডাউনে কাজ হবেনা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেনবলেছেন, সাধারণত এক সপ্তাহের লকডাউন ফলপ্রসূ হয় না। মিনিমাম দুই সপ্তাহ কন্টিনিউ করতে হয়। এর ওপর ডিপেন্ড করে এর সুফল-কুফল বিশ্লেষণ করতে হয়। লকডাউন এই বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সর্বস্তরে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে লক ডাউনে সুফল ফিলবে না।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন,যৌক্তিভাবেই লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হচ্ছে বাজার, হোটেল রেস্টুরেন্ট, ইফতারের দোকান, অলিগলিতে স্বাস্থ্যবিধির লেশমাত্র দেখা যাচ্ছেনা্। কিন্তু প্রশাসনের কোন তৎপরাতা চোখে পড়ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে লকডাউনের উদ্দেশ্য বৃথা যাবে। এ অবস্থায় যেন সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে তৎপরতা চালাতে হবে। তাহলে অবশ্যই সুফল আসবে।
উল্লেখ্য, গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিল মার্কেট কর্তৃপক্ষ। দোকানের সামনে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করার পরিসর আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাছাড়া বিক্রয়কর্মীদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দোকানের কাউন্টারসংলগ্ন এলাকা দড়ি দিয়ে ঘেরানো ছিল।
এবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকার একই নির্দেশনা দিলেও তা ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছেন না। কোনো কোনো ক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী চলার চেষ্টা করলেও অন্যদের কারণে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে মাঝে মাঝে একটু সতর্কতা দেখালেও তারা চলে যাওয়ার পর কেউই কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। আবার কখনও কখন দেখা যাচ্ছে মহল্লার দোকান গুলোর সামনে চেয়ারে বসে থাকছেন স্থানীয় নেতারা। কোন দোকান মালিককে পুলিশ জব্ধ করলে স্থানীয় নেতারা ছাড়িয়ে নিচ্ছেন।
করোনা মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাজারের জন্য দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাজারের প্রবেশমুখে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে পরতে হবে। বাজারের কসাইখানা ও প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। বাজার বন্ধের পর জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কেনাকাটার সময় অবশ্যই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
উল্লেখ্য,বুধবার (২৮ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ৫ মে এপ্রিল পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরআগে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের লাগাম টেনে ধরতে চলমান দ্বিতীয় লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল সংশ্লিষ্টমন্ত্রণালয়।
সাননিউজ/এমআর