নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমপুত্র ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বহিষ্কৃত কাউন্সিলর ইরফান সেলিম মুক্তি পাচ্ছেন। ধানমন্ডি থানায় নৌ কর্মকর্তার করা মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলার জামিন আদেশ কেরানীগঞ্জের কারাগারে পৌঁছালেই তিনি মুক্তি পাবেন।
তার বিরুদ্ধে করা পাঁচ মামলায় কয়েক দফা রিমান্ড ও ছয় মাস দুই দিন কারাভোগের পর জামিনে ছাড়া পাচ্ছেন ইরফান সেলিম।
ইরফান সেলিমের প্রধান আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ বুধবার জানান, ধানমন্ডি থানায় করা নৌবাহিনী কর্মকর্তার মামলায় ২৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালতে অর্থাৎ অ্যাপিলেট ডিভিশনের ফুল বেঞ্চ জামিন বহাল রাখায় তিনি (ইরফান সেলিম) আজ কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন।
তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া জামিন বহালের আদেশ মহানগর আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখার মাধ্যমে জমা দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি আর এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে তার জামিন আদেশ কেরানীগঞ্জ কারাগারে পৌঁছাবে।’
ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে করা মোট ৫টি মামলার মধ্য চকবাজান থানায় করা মাদক ও একটি অস্ত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তাকে অব্যাহতি দেয়।
বাসায় মাদক রাখার দায়ে একটি মামলায় এক বছর ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে এই দুই মামলায় তিনি নির্বাহী আদালতে আপিল করলে জামিন পান তিনি।
ইরফান সেলিমের মুক্তির জন্য ধানমন্ডি থানায় করা নৌবাহিনীর অফিসারকে মারধর ও হত্যার হুমকির মামলায় জামিন প্রয়োজন ছিল। সেই মামলায় ইরফান সেলিমের সর্বোচ্চ আদালতে জামিনের আদেশ বহাল থাকায় তার কারামুক্ত হতে আর কোনো বাধা থাকছে না বলে জানান তিনি আইনজীবী প্রাণ নাথ।
গত ৪ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ইরফান সেলিমের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে প্রতিবেদন দেন।
তার দেহরক্ষী জাহিদের বিরুদ্ধে অপরাধের সত্যতা পাওয়ায় একই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।
গত ২৫ অক্টোবর নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান মোটরসাইকেলে করে নিউ মার্কেট থেকে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের গাড়িটি তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়।
এরপর তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে ওই গাড়ির সামনে দাঁড়ান এবং নিজের পরিচয় দেন। তখন ইরফানের সঙ্গে থাকা অন্যরা গাড়ি থেকে বের হয়ে তাকে কিল-ঘুষি মারেন এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ সময় তার স্ত্রীকেও গালাগাল করা হয়।
এ ঘটনায় ২৬ অক্টোবর সকালে ইরফান সেলিম, তার দেহরক্ষী মো. জাহিদুল মোল্লা, এ বি সিদ্দিক দিপু ও গাড়িচালক মিজানুর রহমান এবং অজ্ঞাতনামা দুই-তিন জনকে আসামি করে ওয়াসিফ আহমদ খান ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেন।
ওইদিনই পুরান ঢাকার বড় কাটরায় ইরফানের বাবা হাজী সেলিমের বাড়িতে দিনভর অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইরফান ও তার দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লাকে।
অভিযানে ইরফানের কক্ষে অবৈধ ৩৮ থেকে ৪০টি ওয়াকিটকি ও বিদেশি মদ পাওয়া যায়। এ ছাড়া একটি অবৈধ পিস্তল ও এয়ারগান উদ্ধার করা হয় বাসাটি থেকে। এই ঘটনায় অস্ত্র ও মাদক আইনে আলাদা মামলা হয় হাজী সেলিমপুত্রের বিরুদ্ধে।
এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদক রাখার অভিযোগে ইরফান সেলিমকে এক বছর কারাদণ্ড দেয়। ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদকে ওয়াকিটকি বহন করার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়।
সান নিউজ/এসএম