নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মা তার সন্তানকে কখনও গলা কেটে হত্যা করতে পারেন না। এ ধরনের একজন অসুস্থ মানুষকে কারাগারে রাখার যৌক্তিকতা কোথায়?’- সংশ্লিষ্ট এক মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) এই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে তিনি এই প্রশ্ন তোলেন। ৯ মাসের সন্তানকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক মায়ের জামিন শুনানিতে এই প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি।
শুনানি শেষে ২০ বছর বয়সী ওই মাকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। পারিবারিক কলহ ও সন্তানের বৈধতা নিয়ে স্বামী প্রশ্ন তোলায় গত বছরের ২৮ এপ্রিল ৯ মাসের সন্তান মাহমুদুল্লাহকে ধারালো চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন মা মুক্তা খাতুন। এ ঘটনায় পরদিন তার স্বামী আব্দুল্লাহ আল মামুন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওইদিনই পুলিশ মুক্তাকে গ্রেফতার করে। পরে তিনি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে মুক্তা খাতুন বলেন, ২০১৭ সালে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী যৌতুকের জন্য নির্যাতন করত। শাশুড়িও আমাকে মারধর করত। পারিবারিক কলহ হলে আমার স্বামী খুলনা/বাগেরহাট চলে যেত। ৬/৯ মাস পর আসত। ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট আমার সন্তান মাহিমের জন্ম হয় আমার পিতার বাড়িতে। তখন আমার স্বামী সেখানে ছিল না।
তিনি বলেন, পরে আমার স্বামী আমাকে বলে, মাহিম তার সন্তান নয়। আমি স্বামীর ওপর রাগ করে চাকু দিয়ে রাত ৯টার দিকে মাহিমের গলা কেটে ফেলি। এ সময় রক্ত বের হলে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসি আত্মহত্যা করার জন্য। কিন্তু গাড়ি চলছিল না। পরে একটি ধানক্ষেত থেকে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। এই আমার স্বেচ্ছাপ্রণোদিত জবানবন্দি।
এই মামলায় হাইকোর্ট আসামিকে জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ বলেন, নিজ সন্তানকে হত্যা করেছেন। আর শিশুটির বয়স ৯ মাস।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মায়ের পক্ষে সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ভারতে এক লোক স্বপ্নে দেখে তার সন্তানকে মসজিদের সামনে এনে জবাই করে। তখন কলকাতা হাইকোর্টে দুজন ইংলিশ জাজ ছিলেন। তারা ওই মামলায় সেই ছেলের বাবাকে খালাস করে দেন। সেখানে বলা হয়েছিল, সে সুস্থ বা স্বাভাবিক নয়।
এরপর আসামি মুক্তা খাতুনের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ।
সান নিউজ/আরআই