মোহাম্মদ রুবেল : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় করোনার শুরুর প্রথম বছরের গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরই যুবলীগের মানবিক কর্মসূচি শুরু হয়।তারই ধারাবাহিকতায় এবারও করোনা মোকাবিলায় মানবিক কর্মসূচি নিয়ে তৎপর যুবলীগ। কর্মহীন অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবা ও ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীসহ সহায়তার মাধ্যমে মানবিক কর্মসূচি চলমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম এই সহযোগী সংগঠন। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে দেশজুড়ে চলছে এ কার্যক্রম।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের আলোচিত ক্যাসিনোকাণ্ডে কেন্দ্রীয় ও মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার নাম চলে আসায় চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় যুবলীগ। ২০১৯ সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হলে শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন গ্রেফতার ও কারাগারে যান। এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন অনেকেই। সংগঠনের পদ হারানো ও বহিস্কারের পাশাপাশি ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও দুদকের নজরদারির আওতায় পড়েন সংগঠনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতা।
এ অবস্থা থেকে দলের ভাবমূর্তি উদ্ধারে ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের মাধ্যমে যুবলীগের নতুন নেতৃত্বে আসেন চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান। এর পরথেকেই তাদের নেতৃত্বে সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী যুবলীগ। তারই অংশ হিসেবে করোনা সংকট শুরু হলে এ সংগঠনটির নেতারা নানা মানবিক কর্মসূচির মধ্যদিয়ে যুবলীগ সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি গড়ে তুলছে মনে করছেন অনেকে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সারাদেশে এ পর্ন্ত প্রায় ১০ লাখের বেশি মাস্ক বিতরণ, মরদেহ দাফন ও ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, ৪৫ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া, জরুরি টেলিমেডিসিন সেবা দিতে মেডিকেল টিম গঠনসহ আরো সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নেতাকর্মীদের যুক্ত রেখেছে সংগঠনটি। করোনার সংক্রমণের কারণে লকডাউন পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কৃষকদের ধান কেটে দিতেও নির্দেশনা দেয়া আছে।
দপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, করোনা শুরুর প্রথম বছর থেকেই দেশব্যাপী নাগরিক সচেতনতায় কাজ শুরু করে যুবলীগ। প্রথম দিকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, মাস্ক এবং প্রচারপত্র বিতরণ করেন নেতাকর্মীরা।পরে লকডাউন শুরু হলে কর্মহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তারা।
এপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে রমজান উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় যুবলীগের মাসব্যাপী খাদ্য সহায়তা, ইফতার বিতরণ চলছে। আসছে ঈদে দরিদ্র ও সংকটে থাকা পরিবারগুলোকে ঈদের বাজার এবং ঈদ উপহার দেয়ার মতো কর্মসূচিও রয়েছে সংগঠনটির। কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সারাদেশের ইউনিটগুলোর অধীনে বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার দুস্থ মানুষকে চাল, ডাল,
তেল, পেঁয়াজ, আলু, লবণ ও সাবানসহ ত্রাণসামগ্রী এবং রান্না করা খাবার দিচ্ছে। এছাড়া রমজানে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। সারাদেশে অনুরূপ কার্যক্রম চলছে।
এদিকে, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে যুবলীগ। সর্দি, জ্বর ও হাঁচি-কাশিসহ যে কোনো রোগে স্বাস্থ্যসেবা দিতে জরুরি টেলিমেডিসিন সার্ভিসের আওতায় সংগঠনের সাবেক উপ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আট সদস্যের সমন্বয় টিম এবং ৯০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে পাঁচটি পরামর্শক টিম গঠন করা হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও করোনায় কেউ মারা গেলে দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশের অনেক জায়গায় শ্রমিক সংকটে পড়া কৃষকদের ধান কেটে দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন নেতাকর্মীরা।
মাইনুল হোসেন খান নিখিল সান নিউজ অনলাইন পোর্টালকে বলেছেন, করোনার এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুসারে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন যুবলীগ মানুষের যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তাদের পাশে দাঁড়ায়। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই মানবিক কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে রয়েছেন তারা। বৈশ্বিক এই সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা এখন প্রতিদিন রান্না করা খাবার বিতরণ করছি। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ যারা আছেন তারাও এই সময়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। আমরা সেদিকেও খেয়াল রাখছি। তাদের জন্যও আমরা আমাদের মানবিক কর্মসূচির আওতায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। মানুষের জন্য যুবলীগের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
করোনা এবং রমজান উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় যুবলীগের উদ্যোগে প্রতিদিন অসহায় ও দুস্থদের মাঝে মাসব্যাপী প্রতিদিন ৬শ প্যাকেট ইফতার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের তত্ত্বাবধায়নে যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে এই কার্যক্রম চলছে। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে কোরআন খতম এবং দোয়া মাহফিলের পর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অসহায়-সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে যুবলীগের উপ-তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক (আইসিটি) সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত সাননিউজ অনলাইন পোর্টালকে বলেন, শুধু করোনার এই সময়েই নয়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত দেশের যে কোনো সংকটে এবং মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় পাশে দাঁড়িয়েছে যুবলীগ।
এই করোনা মাহামারিতেও শুরু থেকে এখন পর্ন্ত যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের নির্দেশনায় অসহায়-সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের মতো কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিনও পৃথকভাবে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রান্না করা খাবার ও ইফতার বিতরণ কর্মসূচি নিয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন বলেন, করোনার শুরু থেকে আমরা মহানগরের অন্তর্গত প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাস্ক-হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ এবং রান্না করা খাবার বিতরণ করছি। প্রতিদিনই একাধিক কর্মসূচি হাতে থাকছে আমাদের।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে অসহায় মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। এছাড়া মসজিদে মসজিদে ইফতার কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
সংগঠনের বাইরেও যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অসহায়-সংকটপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। করোনার প্রথম ধাপের মতো এবারও যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সরোয়ার হোসেন বাবু ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য সামগ্রী, ইফতার, সেহরির রান্না করা খাবার তুলে দিচ্ছেন।
তিনি জানান, ১৫ রোজার পর প্রতিদিন ১শ পরিবারকে রমজানের বাজার করা খাদ্য সহায়তা তুলে দেবেন। এর মধ্যে থাকবে চাল, ডাল, তেল, খেজুর, দুধসহ রমজানের বিভিন্ন উপকরণ। এছাড়া ঈদ উপলক্ষ্যে ৫শ পরিবারকে ঈদের বাজার, নতুন কাপড় (লুঙ্গি, শাড়ি, শিশুদের পোশাক) দেবেন।
এদিকে করোনার প্রথম ধাপের মতো এবারও করোনার দ্বিতীয় ধাপের মহাসংকটে যুবলীগের অন্তর্গত প্রতিটি জেলা/উপজেলা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের কৃষকের জমির পাকা ধান কেটে তাদের ঘরে তুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে যুবলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
টেলিমেডিসিন সেবাদানকারী চিকিৎসক ও তাদের ফোন নম্বর:
সমন্বয়ক কমিটি: ডা. খালেদ শওকত আলী-০১৭৫৫৫৭৭৫৮৯, ডা. মো. হেলাল উদ্দিন-০১৮১৯২৭৫২১২, ডা. ফরিদ রায়হান-০১৭১১৩৭৬৭১৬, ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল-০১৮১৮৭১৫৮৮৫, ডা. মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া রাফি-০১৭১২০০৯১৬০, ডা. আওরঙ্গজেব আরু-০১৭১১১১০৬৭৯, ড. মো. রায়হান সরকার রিজভী-০১৫১৮৪৭৪২৯৮, মো. নাজমুল হাসান-০১৭১২৭৩৯৮০৬, ডা. নুরুল ইসলাম হাসিব-০১৮১৮৭৯৫৯৭৬, ডা. সম্রাট নাসের খালেদ-০১৭১৭৪৬৩৩৮৩, ডা. মফিজুর রহমান জুম্মা-০১৬৭০২৪২৯৬৭, ডা. মো. আতিকুর রহমান-০১৭৪৮৪৭৯০৯৮, ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম জুয়েল-০১৭২২১২২১৫২।
সাননিউজ/এমআর/