নিজস্ব প্রতিবেদক : হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধনের পর থেকেই শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দর্শনার্থী ও আশপাশের বাসিন্দাদের। দীর্ঘদিনের এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলছে শিগগিরই।
হাতিরঝিলের পানি নিয়মিত শোধন প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী জুনে। প্রস্তুতিমূলক এ কাজ শেষ হলে নিয়মিতভাবে শুরু হবে হাতিরঝিলের পানি শোধন প্রক্রিয়া। আর এ প্রক্রিয়া শুরু হলে হাতিরঝিলের দুর্গন্ধযুক্ত বিবর্ণ পানির সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উন্মুক্ত করার পর থেকেই হাতিরঝিল এলাকাটি সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য উল্লেখযোগ্য একটি স্থানে পরিণত হয়। কিন্তু শোধনাগার না থাকায় নোংরা ও দূষিত পানি হাতিরঝিলের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে। বিশেষ করে, শুষ্ক মৌসুমে দূষিত ও নোংরা পানির দুর্গন্ধে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ও আশপাশের বাসিন্দাদের।
এ অবস্থায় ঝিলের পানি শোধন করে দুর্গন্ধমুক্ত করতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার ওই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এরপর নানা জটিলতায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় একাধিকবার। যদিও এবার প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এবং হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস।
তিনি বলেন, হাতিরঝিলের পানি শোধন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি, আগামী জুনের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। ঝিলের পানি শোধন ও দুর্গন্ধমুক্ত করতে এই প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষের দিকে আছে। গত বছর করোনা প্রাদুর্ভাবের পর দীর্ঘসময় প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। যে কারণে কাজের মেয়াদ কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। তবে আমাদের কাজ এবার শেষ পর্যায়ে। জুন মাসের মধ্যেই এই কাজ শেষ করতে পারব। এই বিষয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর হাতিরঝিলের পানির গুণগত মান খারাপ হতে হতে প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাতিরঝিলের আশপাশের বাসাবাড়ির বর্জ্য ঝিলে পড়ার কারণে এখানকার পানি দূষিত হয়ে পড়ে। এ থেকে প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ অবস্থায় লেকের বিভিন্ন স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হাতিরঝিলের পানি ‘অগ্রহণযোগ্য’ পর্যায়ে দূষিত। এ পানি জলজ প্রাণের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ পানি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য মারাত্মক হুমকি। এসব কিছু বিবেচনা করে প্রকল্পটি গ্রহণ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
এদিকে গত ১৯ এপ্রিল হাতিরঝিল সংলগ্ন জলাবদ্ধতার সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে চলমান উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, হাতিরঝিলকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে এর পুরো দায়িত্ব ডিএনসিসির কাছে বুঝিয়ে দিন।
তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত হাতিরঝিল এবং লেকসহ সব জলাশয় দ্রুত ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দিলে সেগুলো উদ্ধার এবং রক্ষণাবেক্ষণে সমন্বিতভাবে আমরা কাজ করবো। তাই বলতে চাই হাতিরঝিলকেও যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারেন তবে এর পুরো দায়িত্ব ডিএনসিসির কাছে বুঝিয়ে দিন। আমরা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে ভালো দিক ফিরিয়ে আনবো। খালগুলো যখন ওয়াসার ব্যবস্থাপনায় ছিল তখন সেগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। হাতিরঝিলেও তাই হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিএনসিসি বিভিন্ন জায়গায় খাল উদ্ধার ও পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করেছে যা চলমান রয়েছে। জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
সান নিউজ/এসএম