নিজস্ব প্রতিবেদক : সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, জাতীয় প্রয়োজন ও আধুনিক সতত পরিবর্তনশীল বিশ্ব ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে ‘কপিরাইট আইন ২০২১’-এর চুড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। তা পাসের জন্য ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক কপিরাইট দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষায় কপিরাইটের গুরুত্ব’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।
এসময় অনুষ্ঠানে আরও যুক্ত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন, বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডের সভাপতি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজ সাবিহা পারভীন, কপিরাইট ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহম্মদ রায়হানুল হারুন, ডিপিডিটি রেজিস্ট্রার মো. আব্দুস সাত্তার, মিউজিক কম্পোজার সোসাইটি বাংলদেশের সভাপতি নকিব খান, সিঙ্গার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক কুমার বিশ্বজিৎ, গীতিকবি সংঘের সিনিয়র সদস্য কবির বকুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, “আইনটির খসড়া তৈরি করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আমরা মতামত নিয়েছি। সেসব মতামতের ভিত্তিতে সমন্বয় করে এই নতুন আইনটি প্রণয়ন হতে যাচ্ছে। সেটি পাশ করার পর কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। একইসাথে আমরা আমাদের মেধাসত্ত্বকে সুরক্ষিত করতে পারবো। আর এ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কপিরাইটের সুরক্ষা প্রদান করা গেলে সৃজনশীল ব্যক্তিবর্গ নতুন নতুন উদ্ভাবনে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সফটওয়্যারসহ অন্যান্য সৃজনশীল কর্মেও প্রসার ঘটবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ও উন্নয়ন সাধিত হবে। ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হবে।”
সেমিনার শেষে কপিরাইট অফিসের পক্ষ থেকে ২০২০ সালের এবং ২০২১ সালের ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষা সম্মাননা’ ঘোষণা করা হয়। শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক কপিরাইট নিবন্ধন করায় ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষা সম্মাননা ২০২০’ পেয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এছাড়াও মেধাসম্পদ সুরক্ষায় কপিরাইটের গুরুত্ব উপলব্ধি ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে কপিরাইট বিষয়ে সার্বিক সচেতনতা সৃজনে মূল্যবান ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখায় দেশের আরও তিন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষা সম্মাননা ২০২০’র জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এরা হলো- স্থপতি ক্যাটাগরিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃৃতি ও কর্মকে যুগ যুগ ধরে নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের বহুমুখি প্রয়াশে বঙ্গবনন্ধুর সমাধিসৌধের নকশা প্রণয়নের জন্য ‘স্থপতিবৃন্দ লিমিটেড’; ফটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে বঙ্গবন্ধুর পুরনো ছবি থেকে নান্দনিক ও উন্নতমানের ডিজিটাল পেইন্টিং/প্রোট্রেট তৈরীর জন্য হাবিবুল্লাহ আল ইমরান; আর্ধিক প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন লোগো, ডিজাইন ও অন্যান্য বিষয় কপিরাইটে নিবন্ধনের জন্য ব্যাংক এশিয়া।
একই সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষা সম্মাননা ২০২১’-ও ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালের জন্য এই সম্মাননা পাচ্ছেন- শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলার ধারণা উদ্ভাবনের জন্য কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. ফয়জুল আলম সিদ্দিক; আঞ্চলিক গানের স্বরলিপির গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে ভূমিকা রাখায় পিএইচপি গ্রুপ; লোক সঙ্গীতের চর্চা ও বিকাশে এবং নান্দনিক উপস্থাপন করে অবদান রাখার জন্য আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং গুগল ল্যাঙ্গুয়েজ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সফটওয়ার উদ্ভাবনের জন্য মাস্টার একাডেমির মোস্তাইন বিল্লাহ।
এ সম্মাননা ঘোষণা করেন রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী। এসময় জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, মেধাসম্পদ সুরক্ষায় কপিরাইটের গুরুত্ব উপলব্ধি ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে কপিরাইট বিষয়ে সার্বিক সচেতনতা সৃজনে মূল্যবান ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখায় এই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষা সম্মাননা ২০২০’ এবং ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষা সম্মাননা ২০২১’-এর জন্য মনোনীত করা হলো। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এক আয়োজনের মাধ্যমে এসব সম্মাননার জন্য স্মারক প্রদান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে যারা সৃজনশীল কাজের সাথে ঘণিষ্টভাবে জড়িত, তাদের মাঝেও সৃজিত কর্মের কপিরাইট রক্ষার প্রতি সচরাচর সচেতনতা পরিলক্ষিত হয় না। এক্ষেত্রে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ভূমিকা প্রশংসনীয়। ইতিমধ্যে এই শিল্পগোষ্ঠী শিল্প-সাহিত্য এবং ওয়েবসাইট ক্যাটাগরিতে ১২৭টি মেধাসত্ত্বের কপিরাইট সনদ গ্রহণ করেছে; এবং নিজেদের মেধাসম্পদ সুরক্ষায় সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণের স্বাক্ষর রেখেছে।
সম্মাননা পাওয়া এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, আমরা কৌশলগত কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছি। যেমন ই-কপিরাইট সিস্টেম, অনলাইন রেকর্ডিং ডকুমেন্টারি সিস্টেমসহ বেশ কিছু কাজ কপিরাইট করছে। ভবিষ্যতে জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতি রেখে চুড়ান্ত কপিরাইট আইন ২০২১ পাশের পর এর যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কপিরাইটের সুফল আনতে চাই।
তিনি আরও বলেন, “এছাড়া, আমাদের ছয়টি ক্ষেত্রে ফোকাস করা দরকার। এগুলো হলো- তথ্য প্রযুক্তি আধুনিকীকরণ, ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ক্ষেত্রে তাদের প্রক্রিয়াকে অনুকূল করা, সাংগাঠনিক ভাবে নিজেদের পরিচালনা করতে পারা, শিক্ষা, বাস্তবতা, এবং কপিরাইট আইন। এসব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে আমরা আমাদের দায়িত্বগুলো যেন পালন করতে পারি সেভাবেই আমরা কাজ করতে চাই।
সান নিউজ/এইচএস/এসএম